ছেলে মেডিকেলে চান্স পেলেও ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভ্যানচালক বাবা

রাজু সরদার ও তার বাবা নাজমুল সরদার
রাজু সরদার ও তার বাবা নাজমুল সরদার  © সংগৃহীত

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা (এমবিবিএস) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাজু সরদার। এতে পরিবারের সবার চোখেমুখে আনন্দ থাকলেও আড়ালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। অর্থের অভাবে মেধাবী এই তরুণের স্বপ্নপূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

রাজু সরদারের বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে। ছোট থেকে মেধাবী রাজু অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অভয়নগর উপজেলার মাগুরা শান্তিলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন জিপিএ-৫। ২০২৩ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি।

তার বাবা নাজমুল সরদার (৪৩) ভ্যানচালক। তিনি এলাকার বিভিন্ন সড়কে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করেন। মা কাকলি খাতুন (৩৮) গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রাজু ছোট। বড় বোন নাজমা খাতুন (২৩) খুলনার বয়রা সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

রাজু সরদার বলেন, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়াতে মনটা কিছুটা খারাপ হয়েছিল। আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছি। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। চিকিৎসক হয়ে মা-বাবার দুঃখ ঘোচাতে চাই। বিনা মূল্যে গরিব মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে চাই। কিন্তু টাকার অভাবে আমার সেই স্বপ্নপূরণ হবে কি না, জানি না।

নাজমুল সরদারের সব স্বপ্ন দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার দুটি ইঞ্জিনচালিত পুরোনো ভ্যান আছে। ছয় বছর আগে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো ভ্যান এবং ছয় মাস আগে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি পুরোনো ভ্যান কিনেছি। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে দিনে গড়ে ৭০০ টাকা পাই। এ টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। 

তিনি আরো বলেনমরাজুর মেডিকেলে ভর্তি হতে কমপক্ষে ২৩ হাজার টাকার দরকার, যা সংগ্রহ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ভর্তির পর বই কিনতে অনেক টাকা লাগবে। এরপর পাঁচ বছর মেডিকেলে লেখাপড়ার অনেক খরচ। অত টাকা আমি কোথায় পাব?’

ছেলের ভর্তির টাকা জোগাড় করা নিয়ে চিন্তায় রাজুর মা কাকলি খাতুনও। তিনি বলেন, আমরা গরিব। অভাবের সংসার। ভ্যান চালানোর টাকা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। রাজুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে পরিবারের কেউ সেদিন রাতে আনন্দে ঘুমাতে পারেনি। কিন্তু ভর্তি হতে অনেক টাকার দরকার। পড়াশোনার খরচ চালাতে প্রতি মাসে টাকা দিতে হবে। এত টাকা আমরা কীভাবে দেব?

প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বলেন, নাজমুল সরদার ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ে দুটোকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়েই মেধাবী। কিন্তু নাজমুলের একার পক্ষে ভ্যান চালানোর মজুরি দিয়ে ছেলেটাকে মেডিকেল কলেজে পড়ানো সম্ভব না। আর্থিক সহায়তা পেলে ছেলেটা মেডিকেলে পড়তে পারবে।


সর্বশেষ সংবাদ