মেডিক্যালের প্রশ্নফাঁস

মেডিকোর সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত কোচিং অ্যাসোসিয়েশনের

অ্যাসেব, মেডিকো
অ্যাসেব, মেডিকো  © লোগো

প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান মেডিকোর সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের ফ্রিল্যান্সার কোচিং পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশ (অ্যাসেব)। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতে সংগঠনটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে থাকা অ্যাসেবের একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের ১৭ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে থাকা সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্য মেডিকোকে সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তাদের মতে, যেহেতু মেডিকোর প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সিআইডি কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে, তাই তাদের অ্যাসেব থেকে বাদ দিতে হবে।

এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রবিবার (১৩ আগস্ট) দেশে বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নফাঁস হওয়ার কথা জানিয়েছিল। একটি চক্র বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার পরিচালনার আড়ালে প্রশ্নফাঁসের কারবার চালিয়ে আসছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে সিআইডি।

এ ঘটনায় নাম এসেছে মেডিকো ভর্তি কোচিং, ই-হক কোচিং সেন্টার, ফেইম কোচিং, প্রাইভেট কোচিং সেন্টার, থ্রি-ডক্টরস কোচিং সেন্টার, ঢাকার ফার্মগেটে ইউনিভার্সেল নামের একটি ভর্তি সহায়তা কেন্দ্র এবং প্রাইমেট নামের একটি ভর্তি কোচিংয়ের নাম। সিআইডি জানিয়েছে, মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের আড়ালে নানা সময়ে এসব প্রশ্ন ফাঁস করেছে চক্রটি। তবে, মেডিকো ছাড়া অন্য কোচিংগুলো অ্যাসেবের সদস্য না হওয়ায় তোদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না অ্যাসেব।

এ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের (অ্যাসেব) সভাপতি মো. আকমল হোসেন বলছেন, এ ঘটনায় তারা লজ্জিত; তারা মেডিকো’র শাস্তি চান। শিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট সেবার আড়ালে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কেউ তাদের সংগঠনে থাকতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলছেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসবে আমাদের  পরবর্তী সভায়। এছাড়াও আমাদের সর্বশেষ সভায় অধিকাংশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে অ্যাসেব থেকে বাদ দেওয়া হবে মেডিকো’কে।

এ বিষয়ে মেডিকোর একাডেমিক কোর্স কো-অর্ডিনেটর ফয়সাল হায়দার জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা এখনো কোনো কিছু জানেন না। এছাড়াও বিগত মিটিংগুলোর বিষয়ে আগে থেকেই জানানো হলেও অ্যাসেবের সর্বশেষ মিটিংয়ের বিষয়ে তাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি। তারা এ বিষয়ে আনু্ষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর করণীয় ঠিক করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে সিআইডি জানিয়েছে, দেশে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে চক্রটি প্রতি বছর গড়ে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছে। অর্থাৎ দেশে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিগত ১৬ বছরে দেড় হাজার ডাক্তারেরও বেশি চিকিৎসক বের হয়েছেন। যারা বর্তমানে চিকিৎসা সেবার সাথে যুক্ত রয়েছেন। তবে, প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

চক্রের ৮০ জন সক্রিয় সদস্য দেশে বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি করার মাধ্যমে শত কোটি টাকা আয় করেছে। প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এরমধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন—জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত ২০২০ সালের প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দীন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রেসের মেশিনম্যান জসিমের খালাত ভাই মোহাম্মদ সালামকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাদের দেওয়া ৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এই চক্রের ১২ জনের নাম আসে। দীর্ঘ দিন তারা পলাতক ছিলেন। অবশেষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে সিআইডি

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড ডাক্তার ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান। তিনি ফাইন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। তিনি গত ১৭ বছরে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার স্ত্রী জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ডাক্তার সোহেলী জামানও এই চক্রের সদস্য। 

এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত; আমরা মেডিকো’র শাস্তি চাই। শিক্ষা ও সংশ্লিষ্ট সেবার আড়ালে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কেউ আমাদের সংগঠনে থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসবে আমাদের পরবর্তী সভায়। আমরা তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি—মো. আকমল হোসেন, সভাপতি, অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশের (অ্যাসেব)।

এছাড়াও এ চক্রের অন্যতম সদস্য ডাক্তার আবু রায়হান, ডাক্তার জেডএম সালেহীন শোভন, ডা. জোবাইদুর রহমান জনি, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক জিল্লুর হাসান রনি, ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল। এছাড়া জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার, রওশন আলী হিমু, আক্তারুজ্জামান তুষার, জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার।

সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক, প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কোনো অপরাধ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

চক্রের ৮০ জন সক্রিয় সদস্য দেশে বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তি করার মাধ্যমে শত কোটি টাকা আয় করেছে। প্রশ্নফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এরমধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন—সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

এর আগে বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিক্যালের প্রশ্নফাঁস করেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। 

এছাড়াও প্রশ্নফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানান সিআইডি প্রধান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোচিং পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন বাংলাদেশ (অ্যাসেব)। বর্তমানে দেশের প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান এই সংগঠনের সদস্য। প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী এই ছায়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহায়ক শিক্ষা নিয়ে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ