প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ
আবদুল আজিজ। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ফেনী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা এই শিক্ষার্থী প্রথমবারের দেওয়া বিসিএসে পেয়েছেন সাফল্য। তার বিসিএস-যুদ্ধ জয়ের গল্প শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের—আমান উল্যাহ আলভী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাফল্য নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
আবদুল আজিজ: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর আমাদের পরিচয় ছাত্র থেকে বেকার হয়ে যায়। এই পরিচয় যতবেশি লম্বা হয়, তত জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। তাই বেকার থেকে সুপারিশপত্র হওয়া খুবই আনন্দের ছিল। বেকার পরিচয়টা আর দিতে হবে না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষাজীবন নিয়ে বলুন।
আবদুল আজিজ: আমার প্রাথমিক পড়াশোনা মাদরাসা থেকে। আলিম দেওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করেছেন?
আবদুল আজিজ: বিসিএস পরীক্ষা দেয়া বা ক্যাডার হওয়া এমন কোন চিন্তা ভাবনাই আমার ছিল না। আমি একাডেমিক ক্যারিয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম; পিএইচডি করা, শিক্ষকতা পেশায় যাওয়া অথবা বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া, আমার চিন্তা ভাবনা ওইদিকে ছিল। তাই একাডেমিক পড়াশোনায় আমার বেশি মনোযোগ ছিল। কিন্তু চতুর্থ বর্ষে এসে বুঝতে পারলাম জীবন এতটুকুও সহজ নয়। করোনা ভাইরাসের কারণে লক-ডাউনের মধ্যেই মূলত বিসিএস নিয়ে একটু সিরিয়াস হই। সিলেবাস প্রিন্ট করি, সিলেবাসে দেয়া টপিকগুলো পড়ার চেষ্টা করি। তখন থেকেই শুরু।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাফল্যের পেছনে অনুপ্রেরণা কে ছিল?
আবদুল আজিজ: অনুপ্রেরণা তেমন কেউ ছিল না। আমি খুব জিজ্ঞাসু প্রকৃতির মানুষ। বাংলাদেশের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র আর স্থানীয় সরকার নিয়ে আমি খুব জানতে আগ্রহী। বই পড়েও পরিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে জানা যায় না, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে আসতে পারলে আমি বিষয়গুলো জানতে পারবো, বুজতে পারবো কীভাবে রাষ্ট্র ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাজ করে, এটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতির সময়টা কেমন ছিল?
আবদুল আজিজ: আমরা কয়েকজন বন্ধু একসাথেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রায়ই আমরা নানা বিষয়ে কথা বলতাম। আলাপ হতো রাজনীতি, ইতিহাস, দর্শন নিয়ে। বন্ধুরা সবাই একসাথে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বলে প্রস্তুতির সময় ভালোই কেটেছে। তারাও শীঘ্রই ক্যাডার হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রস্তুতির বিশেষ কোনো টেকনিক ছিল কি-না, কোন বিষয়টি আপনাকে প্রস্তুতি এগিয়ে রেখেছিল বলে মনে করেন?
আবদুল আজিজ: প্রথমবারে ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার। আমরা যারা মফস্বল শহরে বড় হয়েছি; তারা অনেকে কম জানে চারপাশ নিয়ে, বিশ্বরাজনীতি নিয়ে। কিন্তু ইন্টারনেট বিশেষ করে ইউটিউব সেই ঘাটতিটা কমিয়ে দিয়েছে। আমি ইউটিউবে রিসার্চ বেইসড কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের খুব ফলো করতাম। তাদের ভিডিও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করেছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে ক্যাডার চয়েজ করেছিলেন?
আবদুল আজিজ: আমার প্রথম চয়েজ ছিল পররাষ্ট্র, তারপর প্রশাসন, তারপর পুলিশ, এরপরই শিক্ষা। আমি শিক্ষক হতে খুব আগ্রহী। তাই শিক্ষা ক্যাডার চার নাম্বারে রেখেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ক্যাডার চয়েজ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আবদুল আজিজ: পছন্দ, আগ্রহ ও সামর্থ্য বুঝে ক্যাডার চয়েজ দেয়া উচিত। যদি আপনার পররাষ্ট্র প্রথম পছন্দ হয়, তাহলে ইংরেজিতে প্রশ্ন উত্তর হতে পারে, তাই ইংলিশ স্পিকিং ভালো হওয়া দরকার। ভাইভা বোর্ডে আমাদের পারা প্রশ্ন উত্তর করতে কষ্ট হয়, তাই থোড়া থোড়া ইংরেজি নিয়ে গেলে আপনার ভাইবা খারাপ হবে। হয়ত আপনার উত্তর পুরোটাই জানা অথচ ভাষার কারণে উত্তর দিতে আপনি ব্যর্থ। তাই পররাষ্ট্র চয়েসে দিতে একটু ভাবুন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা বিসিএস দিতে চান তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
আবদুল আজিজ: প্রিলির জন্য একসেট বই কিনে তা মন দিয়ে পড়া। পড়ার পর কমপক্ষে চার বার রিভারস করতে হবে। ভুলে যাওয়ার মতো ইনফরমেশনকে আলাদা নোট করতে হবে। লাইভ এমসিকিউতে টেস্ট দিয়ে নিজের দুর্বল বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, তাদের ব্যাখ্যা পড়তে হবে এবং প্রয়োজনে ওই বিষয়ের বই আবার খুলতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য মনে রাখতে হবে বিসিএস পরীক্ষা যতটা জ্ঞানের তার চেয়ে বেশি দক্ষতার।
সুন্দর, দ্রুত ও শুদ্ধ করে লিখতে পারা, ডায়াগ্রামে উপস্থাপন করা, প্রয়োজনে ম্যাপ আঁকতে পারা, দরকারি ডাটা টেবিল বা চার্ট আকারে উপস্থাপন করা। ভাইবার জন্য এখন থেকেই গুছিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। কেউ সুন্দরভাবে কথা বললে, তার থেকে শিখতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?
আবদুল আজিজ: এটি আমার প্রথম বিসিএস ছিল, অ্যাপিয়ার্ড ফলাফল দিয়ে আবেদন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, এটাতেই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমি ৪৪তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি, ৪৫তম লিখিত পরীক্ষা দেবো। আশা করি ৪৪তম বা ৪৫তমতে আরও ভালো কিছু আসবে। নয়তো আমি শিক্ষক হয়েই প্রজাতন্ত্রের সেবা করে যাব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আবদুল আজিজ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো।