জিতু যে মানুষ হয়নি তার শিক্ষা কে দেবে: আরেফিন সিদ্দিক

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক  © ফাইল ছবি

বর্তমানে সবাই জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সন্তান মানুষ হচ্ছে কিনা এটা কেউ চিন্তা করছে না। আমরা শিক্ষা পেয়েছি, পরীক্ষায় পাস করতে হবে। মানবিক পরীক্ষায় পাস করানো কঠিন কাজ। শিক্ষকদের এই কঠিন কাজ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, অবক্ষয় যখন হয় সর্বক্ষেত্রেই হয়। শুধু শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, শুধু সরকারের নীতিনির্ধারকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমাদের নিজেদের দিকেও নজর দিতে হবে।

আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, শিক্ষকদের ওপর কি ধরনের লাঞ্ছনা চলছে তা আপনারা দেখেছেন। নড়াইলের যে শিক্ষককে অপমানিত করা হয়েছে তার মর্যাদা দেওয়া এবং তিনি যে ওই এলাকার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি সমাজকে সেটা করতে হবে।

শিক্ষানীতি ছাড়া দেশ চলতে পারে না উল্লেখ করে সাবেক এই উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু একমুক্তি শিক্ষার কথা বলেছিলেন। তারপরও আমরা দেখেছি শিক্ষানীতি ছাড়াই দেশ চলেছে। বর্তমানে আমরা দেখছি জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত সবাই। আপনারা চান ছেলেমেয়েও যেন জিপিএ-৫ পায়। শিক্ষকও মনে করে ছাত্রছাত্রী যদি জিপিএ-৫ পায় তাহলে স্কুলের সম্মান বাড়বে। জিপিএ-৫ তো গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভাষা- এগুলোর ওপরে মূল্যায়ন করে। কিন্তু আপনার সন্তান কি মানুষ হচ্ছে, তার মধ্যে কি সততা আছে, তার মধ্যে কি শান্তি-সম্প্রীতির ছাপ আছে, নাকি সে সহিংস। এই চিন্তা কি আপনারা করেছেন? জিতু যে মানুষ হয় নাই তার শিক্ষা কে দেবে? তার পরিবারের সদস্য সেই কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, পরিচালনা কমিটির সদস্য। সে ওই এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। হত্যাকাণ্ডের পরও সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজে উপস্থিত ছিল সে। যখন দেখলো পালানোর সময় এসেছে তখন পালিয়েছে। তারপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি বলেন, শিক্ষক উৎপল কলেজের শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন। তাকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। তখন তো সেখানে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা ছিলেন, তারা করলেন কি? তারা কি তাদের নিরাপত্তার জন্য শ্রেণিকক্ষে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেখি তারা মানববন্ধন করছেন। একটি মানুষকে হারিয়ে পরে মানববন্ধন করার কি অর্থ? আমরা কারো বিপদে এগিয়ে যেতে চাই না। এটাই হচ্ছে মূল কারণ।

শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের নতুন কিছু বিষয় তুলে ধরে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শুধু সমাবেশ করলেই হবে না, আমাদের এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানবিক করে গড়ে তোলা। এরমধ্যে শিক্ষা প্রশাসনে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, এই বাংলাদেশে উৎপল সরকারের মতো আর কাউকে যেন জীবন দিতে না হয়, কোনো শিক্ষককে যেন অপমানিত হতে না হয়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা কারা এটা দেখতে হবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। শিক্ষকদের একটা মর্যাদা ছিল এদেশে। বর্তমান সমাজে শিক্ষকদের অসম্মানের প্রবণতা তৈরি হয়েছে


সর্বশেষ সংবাদ