জানুয়ারির বেতন না পাওয়ায় ভোগান্তিতে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারী

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইল ছবি

জানুয়ারি মাসের বেতন এখনো না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সাড়ে তিন লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী। সাধারণত প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন-ভাতা প্রদান করা হলেও এবার এখনো অর্থ ছাড় হয়নি, যার ফলে শিক্ষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে বেতন না পেলে তারা পরিবার নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। বিশেষ করে যারা ভাড়া বাসায় থাকেন বা মাসিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়, তাদের জন্য এই দেরি ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে উঠছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক কর্মকর্তা জানান, “ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটিতে বেতন দেওয়ায় প্রক্রিয়াগত কারণে বেতন পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, তবে দ্রুতই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষকরা জানুয়ারি মাসের বেতন পেতে পারেন।”

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো।

ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীরা ডিসেম্বর মাসের বেতন পেলেও এখনো জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, এতদিন অ্যানালগ পদ্ধতিতে বেতন দেওয়া হলেও তারা মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারতেন। তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাস শেষ হতে চললেও বেতন মিলছে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়মিত করতে সরকারের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রতি মাসের শুরুতেই বেতন নিশ্চিত হয়।

এ বিষয়ে আলম বাদশা নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হতে চললেও এখনো আমাদের জানুয়ারি মাসের বেতন হয়নি। ধার করে বাড়ি ভাড়া দিতে হয়েছে। সেই ধারের টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। বাড়িতে কোনো টাকাও পাঠাতে পারিনি। আমরা বেতন পাই খুবই অল্প টাকা। সেই টাকা দিতেও এম গড়িমসি। শিক্ষকদের ভোগান্তি কমার চেয়ে দিন দিন আরও বাড়ছে।’

শিক্ষকদের জানুয়ারি মাসের বেতন ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বাজেট অধিশাখা) মোর্শেদা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।’


সর্বশেষ সংবাদ