৪০০ বছরের পুরোনো চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন

সংস্কারের আগে ও সংস্কারের পরের ছবি
সংস্কারের আগে ও সংস্কারের পরের ছবি  © টিডিসি

বাংলার ইতিহাসে মোগল স্থাপত্যশৈলী এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সেই ঐতিহ্যেরই এক অনন্য নিদর্শন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়া গোধা গ্রামের চাঁদগাজী ভূঞা জামে মসজিদ। প্রায় চার শতাব্দী আগে নির্মিত এ মসজিদ আজও তার গৌরব বহন করছে। মসজিদের দেয়ালে উৎকীর্ণ নির্মাণ সাল অনুসারে, এটি মোগল আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চাঁদগাজী ভূঞা, যিনি বাংলার বারো ভূঞাদের অন্যতম ছিলেন। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মোঘল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন এই মসজিদে আজও নিয়মিত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ মসজিদটিকে গেজেটভুক্ত করে। ১৯৯২-৯৩ সালে কিছু অংশ সংস্কার করা হলেও এরপর থেকে এটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত নান্দনিক। তিনটি প্রধান গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের মাঝখানে গম্বুজটি আকারে বড়, যা সুদৃশ্য কারুকাজে খোদাই করা। দরজার ও ওপরে রয়েছে টেরাকোটার কারুকাজ, আর মসজিদের সামনের শ্বেতপাথরের নামফলকে ফার্সি ও আরবি ভাষায় নানা তথ্য খোদাই করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট, উচ্চতা ৩৫ ফুট এবং দেয়ালের পুরুত্ব চার ফুট। চুন-সুরকি ও ক্ষুদ্র ইটের নির্মাণশৈলী মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের পরিচায়ক। মূল প্রবেশদ্বার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে মসজিদে প্রবেশের সময় স্বভাবতই মাথা নিচু হয়ে যায়। দরজার দক্ষিণ পাশে রয়েছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি, যেখানে দাঁড়িয়ে একসময় আজান দেওয়া হতো। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভূঞার কবর।

আরও পড়ুন: বুয়েটে প্রথমবর্ষে হলে উঠতে সর্বোচ্চ ফি ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা টাকা

চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। মোঘল স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে মসজিদটি ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।

নোয়াখালী থেকে আসা দর্শনার্থী মাহমুদুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এত পুরোনো একটি মসজিদ দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। এখানকার স্থাপত্যশৈলী চমৎকার।’

চট্টগ্রাম থেকে আসা আশরাফ আলী নামের আরেক দর্শনার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা খুব বেশি নেই। চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ একটি অসাধারণ নিদর্শন। সরকার যদি এই মসজিদকে  সংরক্ষণে আরও উদ্যোগী হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হয়ে থাকবে।’

ফেনী থেকে আসা অপর এক দর্শনার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মসজিদের পরিবেশ খুব শান্ত, এখানে এলে একধরনের আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়। ৪০০ বছরের পুরনো এ মসজিদটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে।’

আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির প্রথমবর্ষে ভর্তির তারিখ ঘোষণা

এলাকার বাসিন্দারা এই ঐতিহাসিক স্থাপনার যথাযথ সংরক্ষণ চান। তাদের মতে, প্রায় ৪০০ বছরের এই ঐতিহ্য শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এটি এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন। তাই এটি রক্ষা করা প্রয়োজন।

তারা বলেন, মসজিদটির সঠিক সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হলে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মূল্যবান ঐতিহ্য হয়ে থাকবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর যদি যথাযথ উদ্যোগ নেয়, তবে এই স্থাপনা কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আরও উজ্জ্বল ও টেকসই হয়ে উঠবে।

চাঁদগাজী ভূঞার বংশধর হাফেজ জাবের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। এটিকে সংস্কার করলে এ জনপদের ঐতিহাসিক এ স্থাপত্য টিকে থাকবে। সর্বশেষ ১৯৯৩-৯৪ সালে এটি সংস্কার করা হয়েছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য আবেদন করছি।’

আরও পড়ুন: নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এনসিপি নেতারা, কে কোন আসনে

জামসেদ আলম নামের আরেক বংশধর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখানে হিজরি এক হাজার বছর পর তারিখ লেখার সময় এক হাজার অংকটি না লিখে শুধু অবশিষ্ট সংখ্যা লেখা হয়েছে। অর্থাৎ, ১১২২ সালের জায়গায় ১২২ সাল লেখা হয়েছে। এ নিয়মটি সৌদি আরবে হিজরি তারিখ লেখার ক্ষেত্রে চালু রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মসজিদটি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসে, তাই সরকার যদি এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করে, তবে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক মূল্যবান নিদর্শন হিসেবে টিকে থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ