নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এনসিপি নেতারা, কে কোন আসনে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ AM , আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ AM

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে গণপরিষদ গঠনের কথা বলা হলেও দলের ৩৫ নেতা আসন গোছাচ্ছেন। এনসিপি ও দলটির নেতাদের প্রতি সহানুভূতি বাড়বে, এমন আশায় ভোটের মাঠে হামলা-বাধা বা মারধরকে ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছেন তারা। আবার গাড়িবহর নিয়ে শোডাউনের মতো পুরোনো ধাঁচের রাজনীতির সমালোচনাকেও তারা গায়ে মাখছেন না।
এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, দলটির কয়েকজন নেতা রাজনৈতিক পরিবারের হওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় আগে থেকেই তাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়ায় দলটির নেতারা দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন। এতে এলাকায় প্রভাব তৈরি হয়েছে তাদের। আবার অনেকে আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত থেকে কিছুটা পরিচিতি পেয়েছেন। এই তিন শ্রেণি ছাড়াও এনসিপির জেলা ও উপজেলার নেতৃত্বে আসতে চান, এমন অনেকেও নির্বাচনে আগ্রহী। এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দৈনিক সমকাল।
জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। এরপর ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটির সবাই নির্বাচনে লড়বেন না। এনসিপির ভাবনায় রয়েছে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন দলের প্রভাবশালী জনপ্রিয় নেতাদের দলে ভিড়িয়ে প্রার্থী করা।
কে কোন আসনে লড়তে পারেন
এনসিপির নেতাদের মধ্যে কয়েকজন রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন করবেন। দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে সরকারের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে আসা নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) আসনে নির্বাচন করতে পারেন। তিনি এলাকায় সময় দিচ্ছেন।
সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি হাতিয়া দ্বীপে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামে গ্রামে গণশুনানি কর্মসূচি করেছেন। গত সোমবার এক জনসভায় একটি পক্ষের হামলার শিকার হন। জানা গেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করেন।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। গত সোমবার তিনি গাড়িবহর নিয়ে এলাকায় শোডাউন করেন। এর সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তিনি বলেছেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।’
৩০০ আসনে প্রতিদিন বিএনপির অন্তত ৬০০ নেতা শোডাউন করছেন। বিএনপি শোডাউনের রাজনীতি বন্ধ করুক। এনসিপিও শোডাউনের রাজনীতি চায় না। এনসিপি নেতারা কোথাও শক্তি দেখাতে যাননি, মানুষের কথা শুনছেন। আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক, এনসিপি
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তাকে এলাকায় নিয়মিত সভা ও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা হিসেবে তিনি কিছু শক্ত অবস্থানে থাকবেন।
ভোলা-১ আসন থেকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন নির্বাচন করবেন বলে আগে শোনা গেলেও এনসিপির সূত্র জানিয়েছে, তাকে ঢাকা-৯ আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তা দল ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা। ডা. তাসনিম জারার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫৫ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে তাকে গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় প্রার্থী করার আলোচনা রয়েছে। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যদি পদত্যাগ করে রাজনীতিতে যোগ দেন, তাহলে তিনি ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-কলাবাগান-নিউমার্কেট-হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। আসিফের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। যা কুমিল্লা-৩ আসন। এখানে বিএনপির প্রার্থী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তাই আসিফ রাজনীতিতে যোগ দিলে কুমিল্লার বদলে ঢাকা থেকে নির্বাচনে আগ্রহী। যদিও তার বাবা স্থানীয় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, আসিফ কুমিল্লা থেকে নির্বাচন করবেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির লক্ষ্মীপুরে নির্বাচন করতে পারেন। সরকারের পদ ছেড়ে মাহফুজ রাজনীতিতে যোগ দিলে ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হতে পারেন।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ারের পরিবার ঢাকা-৫ (ডেমরা) আসনে রাজনীতিতে আগে থেকেই প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯ এবং সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১ থেকে লড়তে পারেন।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হবেন। নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন সাবেক এই ডাকসু নেতা। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) কিংবা ঢাকায় দেখা যেতে পারে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি এ আসনেরই সাবেক এমপি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি। আশরাফ মাহাদী কওমি ধারা থেকে আসা নেতা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কওমি মাদ্রাসাগুলো প্রভাবশালী।
যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অনিক রায় হিন্দু অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচন করবেন। যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার থেকে নির্বাচন করবেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ছেড়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন। ঢাবি শিবিরের সাবেক এই সেক্রেটারি পটুয়াখালী-২ (বাউফল) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদের আত্মীয়।
যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান গাজীপুর-১ আসনে প্রার্থী হতে চান। যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কুড়িগ্রাম-১ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে এলাকায় সময় দিচ্ছেন যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নরসিংদীতে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। তার বাবা জাকির হোসাইন নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি। ইউনিয়নভিত্তিক মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করছেন আল আমিন।
অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, সম্মানিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকায় ছিলেন যেসব মানুষ, তারা যুক্ত হবেন এনসিপিতে। সিনিয়র সিটিজেনরাও যুক্ত হবেন। অনেকেরই নিজ নিজ এলাকায় জনসমর্থন রয়েছে। বিচার ও সংস্কার শেষে তাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে এনসিপি। আখতার হোসেন, সদস্য সচিব, এনসিপি
টাঙ্গাইল-১ মধুপুর আসনে নির্বাচন করবেন মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ। আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ আগে থেকেই মধুপুরে নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় আছেন। উল্লেখযোগ্য গারো জনগোষ্ঠীর ভোটব্যাংক থাকায় তিনি ভালো সমর্থন পেতে পারেন।
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১ এবং নওগাঁ আসনে কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস নির্বাচন করবেন। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলিত সম্প্রদায়ের ভোটে তারা এগিয়ে থাকতে পারেন।
যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, আবু সাঈদ সুজাউদ্দীন কক্সবাজার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ মাহমুদ খান গাজীপুর-৩, মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন নীলফামারী-৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল ভোলা-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক সিলেটে, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), হাসান আলী চট্টগ্রাম-১৪, নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান নেত্রকোনা-২ আসনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ৩০০ আসনে প্রতিদিন বিএনপির অন্তত ৬০০ নেতা শোডাউন করছেন। বিএনপি শোডাউনের রাজনীতি বন্ধ করুক। এনসিপিও শোডাউনের রাজনীতি চায় না। স্থানীয়রা এত দিন যেভাবে দেখেছেন, প্রার্থী তাদের কাছে সেভাবে আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন। এনসিপি নেতারা কোথাও শক্তি দেখাতে যাননি, মানুষের কথা শুনছেন। রাজনীতিতে নতুন হিসেবে মানুষের কথা শোনাই এনসিপির রাজনীতি।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, সম্মানিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকায় ছিলেন যেসব মানুষ, তারা যুক্ত হবেন এনসিপিতে। সিনিয়র সিটিজেনরাও যুক্ত হবেন। অনেকেরই নিজ নিজ এলাকায় জনসমর্থন রয়েছে। এখনো সারা দেশে এনসিপি বিস্তৃত নয়। বিস্তৃতি ঘটলে আরও অনেকে যুক্ত হবেন। বিচার ও সংস্কার শেষে তাদের সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে এনসিপি।