ঈদের পরের কর্মসূচি জানাল এনসিপি

  © সংগৃহীত

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিজ নিজ অবস্থান করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। কয়েক দিন আগ থেকেই নিজ এলাকায় ভোটকেন্দ্রিক গণসংযোগও করছেন। তবে ঈদের পর রাষ্ট্রের সংস্কার কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার চিন্তা করছে দলটি। এ ছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন— এই তিন বিষয়কে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক কর্মসূচিও দিতে পারে এনসিপি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানায় প্রথম আলো।

তারা বলছেন, বিএনপি যেভাবে সংস্কার প্রশ্নে অনেকটা বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে, সেটি তাদের ভাবিয়ে তুলছে। সে জন্য ঈদের পর সংস্কার নিয়ে আলোচনাকে তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটি এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবে।

এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পক্ষে এনসিপি। দলটিকে রাজনীতি করার সুযোগ না দিতে কঠোর অবস্থানে তারা। কিন্তু নির্বাহী আদেশের বদলে সেটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চায় এনসিপি।

এর আগে আপাতত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় এনসিপি এবং বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো যাতে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেটিও চায় তারা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা হলে কঠোর অবস্থানে যাবে দলটি। ঈদের পর এনসিপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে থাকবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি, এমনটাই বলছেন একাধিক নেতা।

যেসব কর্মসূচি দিতে পারে
ঈদের পরে এনসিপির দলীয় ঘোষণাপত্র ও মৌলিক কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে। জুলাই গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন— এই তিন বিষয় দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব পাবে।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, ঈদের পরে দল গোছানোর ওপর মনোনিবেশ করবে এনসিপি। তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করতে সাংগঠনিক কমিটি গঠন এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যালয় নেওয়ার কাজে মনোযোগ দেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে সাংগঠনিক কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন।

এ ছাড়া সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ এবং জেলায় জেলায় সমাবেশের মতো ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকতে পারে জানিয়ে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে এসব কর্মসূচি করা হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিটিকেও সামনে রাখা হবে। ইসির কাছেও এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হতে পারে।

এনসিপির নিবন্ধন
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি। বিজ্ঞপ্তিতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আহ্বান জায় ইসি। কিন্তু ইসির এই গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম গত ১৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন।

গত ১৮ মার্চ ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

রিটকারী পক্ষের কৌঁসুলি আইনজীবী আবেদা গুলরুখ সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। তবে এই স্থগিতাদেশ শুধু রিট আবেদনকারীর (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয়েছে এনসিপির। নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি হতে হবে) থাকতে হয়। কিন্তু নতুন দল এনসিপির পক্ষে ২০ এপ্রিলের মধ্যে এতকিছু করে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

সংস্কার নিয়ে আলোচনা
সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ পাঁচটি কমিশনের সুপারিশের ওপর নিজেদের দলীয় মতামত ২৩ মার্চ লিখিতভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে বিএনপি। একই দিন এনসিপিও তাদের দলীয় মতামত জমা দিয়েছে।

বিএনপির মতামতের সঙ্গে এনসিপির মতামতের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন বিএনপি সংবিধানের মূলনীতির বদল চায় না; কিন্তু এনসিপি চায়। বিএনপি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে আর এনসিপি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চার বছর করার পক্ষে। এ ছাড়া একই ব্যক্তির রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা না হওয়ার সুপারিশে বিএনপি ভিন্নমত জানিয়েছে। এনসিপির মতামত এর উল্টো।

সম্প্রতি বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংস্কারের প্রশ্নে নেতিবাচক সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। যেমন ২৮ মার্চ চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সরি, এটা আপনাদের দায়িত্ব নয়। আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষ যাঁদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবে, এটা তাঁদের দায়িত্ব। আপনাদের দায়িত্ব না। এটা ভুলে যাবেন না৷’

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সংস্কারের প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা হাজির করব। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংস্কারে সরকারের উদ্যোগকে দৃশ্যমান করা, গণহত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে আমরা রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

বিএনপি এবং এনসিপি ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়ে মাঠে থাকলে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আগের মতো হানাহানি-মারামারির যে রাজনীতি ছিল, তার বাইরে এসে পলিসি নির্ধারণের যে রাজনীতি, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেইদিকেই এগোনো উচিত।’


সর্বশেষ সংবাদ