আলীবাবা’র শীর্ষ নির্বাহীর পদ ছাড়ছেন জ্যাক মা

মধ্যবয়সেই থেমে যাচ্ছে আলীবাবা’র বিশ্বজয়ের গল্প?

আলীবাবার চেয়াম্যান জ্যাক মা
আলীবাবার চেয়াম্যান জ্যাক মা

“হাল ছেড়ে দেওয়া খুব সহজ, পরিবার-সমাজ-আর্থিক প্রতিকূলতার দোহাই দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু লক্ষ্য অটুট থাকলে, আর সেটার পেছনে দিনরাত পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই তোমাকে আটকে রাখার! তাই অজুহাত দেওয়া বন্ধ করো, কাজে নেমে পড়ো, এই মুহূর্তেই, আজ থেকেই!” উক্তিটা অনলাইন কেনাকাটায় শীর্ষপ্রতিষ্ঠান আলীবাবা ডটকমের চেয়ারম্যান ৪৫ বছর বয়সী জ্যাক মা’র। শীঘ্রই যিনি মানবসেবার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পদ ছাড়ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস-এর অনুসন্ধান-

আলীবাবা। অনলাইনপ্রেমী মানুষদের বেশ ভালোভাবেই পরিচিত নামটি। পরিচিতি হবেই বা না কেন, অনলাইন কেনাকাটায় এটিই যে এখন বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। চীনা তরুণ জ্যাক মা এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তিনিই এ পদটি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক ‍টাইমস। জ্যাক মা’র সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই এ সংবাদ প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি। অবশ্য ‘সরে যাওয়া’ সক্রান্ত ওই সাক্ষাৎকারে জ্যাক মা বলেছেন, ‘অবসরে যাওয়া মানে যুগের শেষ নয়, শুরু হচ্ছে।’ আর বিবিসি জানিয়েছে, শীর্ষ নির্বাহীর পদ ছাড়লেও আলিবাবার পরিচালনা পরিষদে থাকছেন জ্যাক মা; আগামী দিনে মানবসেবা করার লক্ষ্যে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাস্তবিক অর্থে জ্যাক মা’র পরিচিতি শুধু বড় ধনী হিসেবেই নয়, অটল সংকল্পের কারণেও গোটা পৃথিবীতের তার সুনাম রয়েছে। তার গল্পে বলা হয়ে থাকে, বারবার ব্যর্থতা আর প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, অসম্ভব সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে।

জ্যাক মা ও আলীবাবার গল্প: কোনো সন্দেহ নেই আলীবাবা মানেই জ্যাক মা। খাট ও হালকা জ্যাক মিডিয়ায় দুর্বল একজন মানুষ হিসেবেই পরিচিত হন। দেখতে অতি সাদামাটা জ্যাক মা। স্বতন্ত্র চেহারাই তাঁকে বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে। তার এই সাধাসিধে চেহারাকে কখনোই কর্পোরেট নেতা মনে হয়না। আবার চেহারার গঠনে স্পিলবার্গের চলচ্চিত্র ই টির মিল থাকায় অনেকে চীনা জ্যককে ইটি বলেন। অন্য ব্যবসায়ী নেতারা যেখানে তাদের শিক্ষা আর অন্যান্য নিয়ে দম্ভ করে, জ্যাক তেমন কিছুই করেন না। তিনি বলেন,আমার কোনো ক্ষমতাধর বা ধনী বাবা ছিল না। পড়াশোনার জন্য অন্য ক্ষমতাধরদের মতো সে বাইরে পড়াশোনাও করেননি। টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা না করেও টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন তিনি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, আমি আজ পর্যন্ত কোডিং বুঝিনা, ইন্টারনেটের পিছনের প্রযুক্তিও আমি বুঝিনা। খুব সাধারণ অবস্থা থেকে সে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, আমি খুব সাধারণ, স্মার্ট নই। সবাই ভাবে আমি খুব স্মার্ট, কিন্তু আমার মস্তিষ্কে যথেষ্ট ঘাটতি আছে।

সঙ্গীদের সঙ্গে জ্যাক মা 

জ্যাক মা হলিউড চলচ্চিত্র ফরেস্ট গাম্পের বড় ভক্ত। তাঁর প্রথম দিককার ভাষণে ফরেস্ট গাম্পের কথা থাকতোই। জ্যাকের ভাষায়, ‘ফরেস্ট গাম্পকে সবাই বোকা ভাবলেও, সে নিজের কাজটা জানতো।’ আলীবাবার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে জ্যাকের গাম্প ভক্তি এখনো অটুট। এ নিয়ে একটি মজার ঘটনাও আছে। আলীবাবার শেয়ার ছাড়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে জ্যাকের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিচ্ছে টেভি চ্যানেল সিএনবিসি। প্রিয় ব্যক্তিত্ব জিঙ্গেস করতেই জ্যাকের উত্তর ফরেস্ট গাম্প। উপস্থাপক কিছুটা বিরতি দিয়ে জিঙ্গেস করলেন, আপনি জানেন তো ফরেস্ট গাম্প একটি কাল্পনিক চরিত্র।

জ্যাক আলীবাবার দর্শন ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রথমে ক্রেতা, দ্বিতীয় কর্মী এবং তৃতীয় শেয়ারহোল্ডাররা। তার কাছে প্রাধান্য তার ক্রেতাগোষ্ঠী। এই তিন গোষ্ঠীর জন্যেই আলাদা আলাদা উপযুক্ত সেবা ব্যবস্থা রয়েছে আলীবাবার। আর জ্যাকের মন্ত্রের কারণেই এতোটা সফল আলীবাবা। আলীবাবা তার কোম্পানি মূলমন্ত্রে ছয়টি বিষয়কে প্রধান্য দেয় যার নাম ‘সিক্স ভেইন স্পিরিট সোর্ড’। ছয়টি বিষয় হলো, কর্মী প্রাধান্য, টিমওয়ার্ক, পরিবর্তন, সততা, আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি। আলীবাবা শুরু থেকেই পুরো টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে, সমতায় বিশ্বাস করে। যে কারণেই চীনের ও বিশ্বের অন্যসব প্রতিযোগীর চেয়ে ভিন্ন আলীবাবা।

ধূমকেতুর বেগে উত্থান: আলিবাবা রাতারাতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়। ১৯৯৯ সালে আলিবাবা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় গোল্ডম্যান স্যাক্স থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার এবং সফটব্যাঙ্ক থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পায়। জ্যাক মা বুঝতে পারেন সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ২০০৫ সালে ইয়াহু আলিবাবার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৪০% শেয়ার কিনে নেয়। এটা ছিল আলিবাবার জন্যে বিশাল অর্জন। চীনের অনলাইনভিত্তিক কেনাবেচার বাজারে আলিবাবার সাথে তখন ই-বে এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ বিনিয়োগের ফলে আলিবাবা ও ইয়াহু দু’পক্ষই দারুণভাবে লাভবান হয়।

২০১৩ সালে জ্যাক মা আলিবাবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে সরে নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। সে বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে আলিবাবা’র প্রাথমিক গণ প্রস্তাবনা ছাড়া হয়, আলিবাবার এ অবিস্মরণীয় সাফল্যে জ্যাক মা বলেন, ‘আজ আমরা মানুষের টাকা নয়, তাদের বিশ্বাস অর্জন করেছি!’

 


সর্বশেষ সংবাদ