বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান ও সরকারের লোগো © ফাইল ছবি
বিএড/বিএমএড কালো আইন বাতিল ও ১০ম গ্রেডের দাবি জানিয়েছেন মাদ্রাসার সহকারী মৌলভীরা। আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) সচিব বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন তারা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে প্রচলিত বিএড/বিএমএড কালো আইন শিক্ষকদের মধ্যে মারাত্মক বেতন বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে কামিল (মাস্টার্স সমমান) ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, তারা ন্যায্য বেতন ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কামিল ডিগ্রির অবমূল্যায়ন: কামিল ডিগ্রি ইতিমধ্যেই মাস্টার্স সমমান হিসেবে স্বীকৃত, তবুও বিএড/বিএমএড ছাড়া শিক্ষকরা উচ্চতর গ্রেড পাচ্ছেন না। এর ফলে একই পদে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে অন্যায় বেতন বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ৪ বছর মেয়াদি অনার্স থাকলে ১০ গ্রেড দেওয়া হলেও কামিল (মাস্টার্স সমমান) থাকার পরও ১০ গ্রেড দেওয়া হচ্ছে না।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, এ আইন শিক্ষক সমাজে হতাশা সৃষ্টি করছে এবং মানসম্মত শিক্ষাদান ব্যাহত করছে। অতএব, অবিলম্বে বিএড/বিএমএড কালো আইন বাতিল করা হোক। কামিল ডিগ্রিকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট ১০ম গ্রেড ও বেতন সুবিধা প্রদান করা হোক। শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বেতন বৈষম্য দূরীকরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এতে শিক্ষক সমাজ উৎসাহিত হবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ।
সহকারী মৌলভীদের সমস্যা ও যুক্তিগুলো হলো
প্রশিক্ষণ সুযোগের সীমাবদ্ধতা: দেশে বিএড/বিএমএড প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত আসন নেই। ফলে অনেক যোগ্য শিক্ষক বছরের পর বছর বঞ্চিত থাকছেন এবং গ্রেড পাচ্ছেন ন।
বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ সমাধান: প্রয়োজনে নবাগত শিক্ষকদের জন্য ১ বছর মেয়াদি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, কিন্তু পুরোনো শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরি।
সংবিধানসম্মত অধিকার: বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৯ নং ধারায় সমান সুযোগ ও বৈষম্যহীন আচরণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আইন এই সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্হি।
একাডেমিক মান: কামিল ডিগ্রি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত একাডেমিক ডিগ্রি, অথচ বিএড/বিএমএড একটি পেশাগত প্রশিক্ষণ । কামিল ডিগ্রিধারীদের বঞ্চিত রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়।
শিক্ষার মানোন্নয়ন: একই পদে একই কাজ করেও বৈষম্য থাকলে শিক্ষক সমাজের মনোবল ভেঙে যায়, ফলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের মান ব্যহত হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: দীর্ঘদিন ১০ম গ্রেড না পাওয়ায় শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা তাদের পরিবার ও সামাজিক মর্যাদার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা: অনেক দেশে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই উচ্চ গ্রেড দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এই আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা উচিত।
শিক্ষক সংকট প্রতিরোধ: বেতন বৈষম্য বজায় থাকলে নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারাবে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষক সংকট তৈরি করবে।