নির্দেশনা মানছেন না

দিন-রাত আম গাছে কাটিয়ে দিচ্ছেন রাবি শিক্ষার্থীরা, থাকেন বস্তা হাতে

আম পাড়তে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষার্থী
আম পাড়তে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরেও ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসের আম গাছে উঠছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত এলাকার শিক্ষক কোয়ার্টারের গাছে উঠেও ফল পাড়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারে অনুমতি ছাড়া আম পাড়ায় নিষেধ করলে শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের অধ্যাপক আক্তার বানুর সঙ্গে তর্কে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। দিন-রাত এক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আম আহরণ করছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। অনেক সময় বহিরাগতরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে অধ্যাপক আক্তার বানু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত এলাকায় অনুমতি ছাড়াই অবাধে শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়ছেন। আবার বাসার গাছে উঠেও ফল পাড়ছেন। তাদের নিষেধ করলে কথা না শুনে উল্টো তর্কে জড়াচ্ছেন। এটা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আচরণ হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বহিরাগত অনেকও গাড়ি সংরক্ষিত এলাকায় অবাধে প্রবেশ করছে। আম পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিগতদের এমন উৎপাতে শিশুরা নিরাপদে খেলাধুলা করতে পারছে না। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো শক্তভাবে দেখার অনুরোধ করেছেন এ অধ্যাপক।

আরও পড়ুন: আম পাড়তে গিয়ে নাকের পর কোমড় ভাঙল রাবি ছাত্র

গত ৪ জুন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে রাবি ক্যাম্পাসের গাছে না উঠার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাসের মৌসুমি ফল পাড়া অবস্থায় কোন শিক্ষার্থী যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হয়, সেজন্য এ নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ নির্দেশনা কোন শিক্ষার্থীই মানছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের নির্দেশনার পরেও ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকের শিক্ষক কোয়ার্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং সেদিকের অন্যান্য আম বাগানসহ ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বরের জাম গাছে ঝুঁকি নিয়ে উঠে এসব মৌসুমি ফল আহরণ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষক কোয়ার্টার এলাকায়ও বিনা অনুমতিতে ঢুকে আম-কাঁঠাল পাড়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

বিগত বছরগুলো থেকে চলতি বছর আম-কাঠালের মৌসুমে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‘‘এই ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও অধ্যাপনা মিলে প্রায় ৪৫ বছর থেকে রয়েছি। কিন্তু ক্যাম্পাসের ফল পাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখিনি। ভোরে হাঁটতে বের হলে বস্তা হাতে শিক্ষার্থীদের গাছে উঠতে দেখা যায়। বিকেলে দল বেঁধে আম-জাম পাড়ার মিশন সম্পন্ন করে তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। রাতেও গার্ডের নিষেধ অমান্য করে গাছে উঠেন তারা।’’

আরও পড়ুন: গাছে আম পাড়তে উঠে পড়ে গিয়ে নাক ফাটলো রাবি ছাত্রের

এ অধ্যাপক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে এ মৌসুমি ফল আহরণে দিনরাত বাধা হচ্ছে। দিনে দুপুরে ক্যাম্পাসের গাছে ঢিল ছুড়ছে। অথচ সামনে-পেছনে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না; পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে এসে নিয়ম-শৃঙ্খলা কিংবা নৈতিকতাবোধ জাগ্রত না হলে আর কোথায় হবে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছে প্রক্টরিয়াল টিম। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অকারণে চলাফেরারোধ এবং শিক্ষার্থীদের গাছে উঠার ব্যাপারগুলোও আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নির্দেশনা অমান্য করে কোন অনৈতিক কাজ করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে, গত ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটের সামনের গাছ থেকে পড়ে কোমড়ে আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন ইলেকট্রনিক্স এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুভাষ চন্দ্র। এছাড়া গত ২৯ মে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের গাছের আম পাড়ার সময় পড়ে গিয়ে নাকে চোট পেয়ে আহত হন ফারুক হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী।


সর্বশেষ সংবাদ