ঢাবির ছাত্র-শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২৫ AM , আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৮ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনের নিকটে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আখতারুজ্জামান সিনবাদ, ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈ-এর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তীতে চারুকলা অনুষদে বন্ধুদের সঙ্গে বুয়েটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী বসে ছিলেন। এ সময় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বুয়েটের ওই ছাত্রীকে দেখে ক্রমাগত শিস দিতে থাকেন। বুয়েটের ওই ছাত্রী ঢাবি শিক্ষকের দিকে তাকালে তিনি লম্পটদের মত অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখটিপে দিতে থাকেন। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ঢাবি শিক্ষক বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করেন।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ঢাবি শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ হুমকি-ধামকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন ও ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বন্ধু হলে থাকে কি না- সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন ও তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এহেন আচরণের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনের নিকটে দেওয়া অভিযোগপত্রে বুয়েটের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী সই করেছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, একজন শিক্ষকের নিকটে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয়। যা শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকালে গত ১৩ এপ্রিল রাতে জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে একই অনুষদের প্রথমবর্ষের তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঢাবি শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ ‘বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ’ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ ও সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈও ওই শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপার্সন সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা অনুষদ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন : চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়লেন জাবির সাবেক ভিসি ফারজানা
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবির সাবেক-বর্তমান ওই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ডিন অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ঘটনাটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। এ রকম কোনো কিছু ঘটেনি। আমার শিক্ষকতা, ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কেউ এ ধরনের কারসাজি করছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ফ্যাক্ট চেকিং কমিটি গঠন করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে এ অভিযোগ পাঠানো হবে।
তিনি আরও জানান, যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তিনদিন যাবত তাদের কয়েকজনের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষককেও চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। উনি লিখিতভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানাবেন। অভিযুক্ত দু’জন ছাত্রের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আরেকজন সাবেক স্টুডেন্ট, তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা চলছে। আমরা ফ্যাক্ট খুঁজছি। ঘটনার ভিত্তি থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।