রাবিতে বাবার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলের আবাসিক সিট বাতিল

মহিহার হল, ইনসেটে প্রাধ্যক্ষ
মহিহার হল, ইনসেটে প্রাধ্যক্ষ  © টিডিসি ফটো

বাবার অশোভন আচরণ ও উচ্চস্বরে কথা বলার জের ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসিকতা দেয়া এক শিক্ষার্থীর সিট বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ। রবিবার (১৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ তার সিট বাতিল করে উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মতিহার হলে রোকন উদ্দিন কাইকাউস , দর্শন বিভাগ , শিক্ষাবর্ষ - ২০১৮-১৯ কে ২ মার্চ ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হলে সিট না থাকায় তাকে কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলা হয় । তাকে বলা হয় কিছু দিনের মধ্যে নতুন ব্লক চালু হলে সেখানে সিট বরাদ্দ করা হবে । ৬ এপ্রিল ছেলের বাবা আমার সাথে দেখা করে এবং সিটের ব্যাপারে খোঁজ নেন । আমি তাকে আস্বস্ত করি নতুন ব্লক চালু হলে সিট বরাদ্দ পাবে ।

আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ছেলের বাবা এক সপ্তাহ পরে অর্থ্যাৎ ১৩ এপ্রিল বেলা ১টা ২৬ মিনিট আমাকে ফোন করে সিট কেন দেওয়া হচ্ছে না , তার কারণ জানতে চায় । আমি তাকে বলি একটু সময় লাগবে কিন্তু তখন সে আমাকে কোন সময় দিতে চায় না রূঢ় ভাষায় কথা বলে এবং উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকে । তার এরূপ আচারণ অশোভন এবং অপমানজনক সে জন্য রোকন উদ্দিন কাইকাউস , দর্শন বিভাগ কে হলে ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

জানা যায়, সিট বাতিল হওয়া ঐ শিক্ষার্থী রোকন উদ্দিন কাইকাউস।তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এই শিক্ষার্থী খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের (বীর বিক্রম) নাতি। তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দপ্তরে চাকরি করেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজ-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত যে কারণে

এদিকে হলে উঠার জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা শেষে অবশেষে আবাসিকতা পেলেও নির্ধারিত সিটে অন্যজনকে তোলার অভিযোগ করে রোকন উদ্দিন বলেন, আমি খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের (বীর বিক্রম) নাতি পরিচয় দিয়ে হলের আবাসিকতার জন্য সব কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করি। গত ২ মার্চ ১৪৬ নম্বর রুমে ট্যাগ দিয়ে আবাসিকতা নিশ্চিত করেন মতিহার হল প্রাধ্যক্ষ। পরে সেই রুমে গিয়ে দেখি মাস্টার্সের দুই ভাই আছেন। অফিসে যোগাযোগ করলে আমাকে বলে এক মাস পরে তারা চলে যাবেন তখন উঠতে পারবে। এক মাস পর গিয়ে দেখি ওই রুমে আমর পরের বর্ষের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ সেশনের দুই ছেলেকে উঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পরে প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, এক সপ্তাহর মধ্যে তোমাকে অন্য রুমে তুলে দিব। এক সপ্তাহ পরে যোগাযোগ করলে তিনি সরাসরি নাকচ করে দেন। এবং অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় কার্ড জমা দিয়ে ভর্তির টাকা ফেরত নিয়ে যেতে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বলেন, হলের শৃঙ্খলা কোন কর্মকাণ্ডের জন্য কারো সিট বাতিলের এখতিয়ার হল প্রশাসন রাখে। ছেলেকে হলে তোলার জন্য ঐ শিক্ষার্থীর বাবা একধরণের চাপ প্রয়োগ করেছেন। তাদের কাছে একসপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম, কারণ নতুন ব্লকের কাজ শেষ হলেই তাকে তোলা হবে। কিন্তু একটু সময় বেশি লাগায় উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলাসহ অশোভন আচরণ করেন তার বাবা।

তিনি বলেন, ঐ শিক্ষার্থীর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন দপ্তরে কাজ করেন। সেই সুবাদে অনুরোধ করলে বিশেষ বিবেচনায় তাকে আবাসিকতা দেয়া হয়েছিল।

হলে পুনরায় সিট পাবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিধি অনুযায়ী চলি, হলের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে৷ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করেন বলে এসব কিছুই মানবেন না? তারা যদি তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান, তবে ঐ শিক্ষার্থীকে হলে তোলার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ