ঘটি-বাটি নিয়ে জাবি উপাচার্যের বাসভবনে যাওয়ার হুমকি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:০২ PM , আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:০২ PM
‘ডাইনিং হল কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া না মানলে দরকার পড়লে ঘটি বাটি নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে যাব। প্রয়োজনে আমরা দিনের পর দিন এই বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রাখব।’ বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল হক রনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং হল কর্মচারীদের তিন দফা দাবিতে একাত্মতা পোষণ করে আজ তিনি এ কথা বলেন।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ডাইনিং হল কর্মচারীরা তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ডাইনিং কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ, চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা ও কর্মচারীদের বীমার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। পরবর্তীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
রাকিবুল হক রনি আরও বলেন, ডাইনিং কর্মচারীদের খাবার খেয়ে আজ অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক, অফিসার হয়েছেন, কিন্তু আপনারা বড় নিমোক হারাম। যাদের বেড়ে দেওয়া ভাত খেয়ে আজ এত বড় বড় পদে আছেন সেসব মানুষের কথা ভুলে গেলেন। অনেক প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অনেকবার কর্মচারীদের আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কিছুই করেননি।
তিনি বলেন, এই দুর্মূল্যের বাজারে ডাইনিং কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য মাসিক শিক্ষাভাতা ৪০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা দেওয়া হয়। কোন যুক্তিতে তাদের এই এত অল্প বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে? এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন ভাতার অর্ধেকও ডাইনিং কর্মচারীদের দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহির ফয়সাল বলেন, ৩৭ বছর হলের ডাইনিংয়ে চাকরি করার পরও কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকজন কোটি টাকা লুটপাট করবে অন্যদিকে হলের ডাইনিংয়ের কর্মচারী না খেয়ে থাকে, অর্থাভাবে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে এই বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।
শেখ হাসিনা হলের কর্মচারী রুজিনা বলেন, আট বছর ধরে চাকরি করে আসছি, কিন্তু এখন বেতন পাচ্ছি ছয় হাজার টাকা। স্থায়ী কর্মচারীরা যেখানে আরাম আয়েশে চলছে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে কম বেতন পাই আমরা।
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ডাইনিং বয় আসাদ মিয়া বলেন, ১৯৮৪ সালে ৫০ টাকা বেতনে চাকরিতে ঢুকে এখন বেতন পাই আট হাজার পাঁচশ টাকা। পরিবারের চাহিদা পূরণ করাতো দূরের কথা নিজেদের চাহিদাই পূরণ করতে পারি না। এত বছর ধরে এই ডাইনিংয়ে কাজ করে আসছি কিন্তু আমাদের চাকরি আজ পর্যন্ত স্থায়ী হয় নাই। ডাইনিংয়ের কাজ ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজও জানা নাই। এখন আমাদের চাকরি স্থায়ী না করলে আমরা কী নিয়ে বাঁচবো? পেনশনের জন্য এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা, কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সেটাও দিতে অস্বীকার করা হয়।
এ বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও চাকরির মেয়াদ নিয়ে সিন্ডিকেটের নীতিমালা আছে। সে নীতিমালায় বলা আছে তাদের চাকরির মেয়াদ ৩২ বছর। অথবা তাদের ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত। এর আগেও কর্মচারীদের অবস্থার উন্নয়নে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। মাঝখানে তাদের বেতন বন্ধ ছিল, উপাচার্যের নির্দেশে সেটাও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও তারা আন্দোলনে নামছেন। এ অবস্থায় তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা কতটুকু। সিন্ডিকেটের একটা সিদ্ধান্ত রিভিউ করতে গেলেও তো ছয়মাস সময় লাগে।