দোকানদার ছাড়াই দোকান চলছে ঢাবিতে

দোকান চলছে দোকানদার ছাড়াই।
দোকান চলছে দোকানদার ছাড়াই।  © টিডিসি ফটো

দোকান আছে কিন্তু দোকানদার নেই এমনটি কখনও দেখা যায় না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএল) সামনে এরকমই একটি দোকান বসেছে যেখানে পণ্য আছে কিন্তু নেই কোনও দোকানদার। প্রতিটি পণ্যের সাথে লেখা আছে দাম। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পণ্য নিয়ে সেই পণ্যের নির্ধারিত দাম মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পরিশোধ করে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যতিক্রমী এই দোকানের উদ্যোক্তা হচ্ছেন নাঈম আশরাফ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। বর্তমানে ইউনিয়ন ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রলীগের শামসুন্নাহার হলের নেতৃত্বে উর্মি ও নীলা

আশরাফের এই দোকানে বই ছাড়াও রয়েছে খাতা, নোটবুক, কলম, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার। কোন কিছু কেনার পর সেটির দাম পরিশোধ করতে হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা 'বিকাশ' এর মাধ্যমে। এই দোকানে যেকোন দু'টি পণ্য কিনলেই তার সাথে একটি চকলেট উপহার পায় ক্রেতারা। তার দোকান থেকে শুধু বই কেনা নয় চাইলে ক্রেতা বই কয়েক সপ্তাহের জন্য ভাড়াও নিতে পারবেন। যেকোন জনপ্রিয় বই ৭ দিনের জন্য বিক্রয়মূল্যের ১০% দামে, ১৪ দিনের জন্য বিক্রয়মূল্যের ২০% দামে ও ২১ দিনের জন্য বিক্রয়মূল্যের ৩০% দামে নিয়ে যেতে পারবে ক্রেতারা। তার এই দোকানে নির্দিষ্ট কোন বই তালিকা নেই। কিন্তু নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ এলাকায় যেসব বই পাওয়া যায় তার সবই পাওয়া যাবে এখানে।

 

ছবি: দোকানদার ছাড়াই দোকানের একটি চিত্র।

 

এই দোকানের পাশাপাশি ফেসবুকেও যেকোন ক্রেতা তার পছন্দের পণ্য অর্ডার করতে পারবেন। এজন্য 'বুকলেন্ডু' নামে একটি ফেসবুক পেইজ আছে আশরাফের। এই পেইজ থেকে যেকোন বই কম দামে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। এসব পণ্য কোন প্রকার ভেলিভারি ফি ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেয়া হয়। এছাড়া কেউ চাইলে কিস্তিতেও তার ক্রয় করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।

বুকলেন্ডু ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের 'অল্প সময়ের জন্য অল্প দামে বই' সেবা পৌঁছে দিতে চান উদ্যোক্তা আশরাফ।

আরও পড়ুন: এইচএসসির ফল ৭ ফেব্রুয়ারির পর

এ বিষয়ে উদ্যোক্তা নাঈম আশরাফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আমি অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম ব্যতিক্রম কিছু করবো। এরপর এই উদ্যোগটি নিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যদি একটা জায়গায় পণ্য রাখি এবং একইসাথে সেই পণ্যের দাম পরিশোধের কিছু উপায়ও দিয়ে রাখি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেটিকে উপভোগ করবে। পাশাপাশি যেহেতু এখানে কোন দোকানদার থাকবে না, এটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সততা চর্চা করারও একটি সুযোগ পাবে। সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে পণ্যের দাম দিবে শিক্ষার্থীরা। আমার দোকানে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করেছি। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছি। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাম্পাস খুললে পুরোদমে শুরু করার চিন্তাভাবনা আছে।

এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কেন নিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আশরাফ বলেন, সাধারণত এরকম কোন দোকান চোখে পড়ে না। তাছাড়া দোকানদার থাকলে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতার সাথে ঝামেলা হয়। এছাড়া এটিকে আমি সততা চর্চা করার একটা মাধ্যম বলে মনে করি। পণ্য ও পণ্যের দাম এখানে দেয়া আছে। যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা সততার পরিচয় দিয়ে আমার পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এর পাশাপাশি তারা এটাকে উপভোগও করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ঢাবি জিয়া হল ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আজহার-শান্ত

এদিকে এই দোকানকে নিজেদের সততার জানান দেয়ার অন্যতম প্লাটফর্ম বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন এর মাধ্যমে একজন ক্রেতা তার পণ্য কিনে দাম পরিশোধ করছে কোন বিক্রেতা ছাড়াই যা একদিকে খুবই আনন্দের অন্য দিকে সততার মাপকাঠি বলা যায়।

এ বিষয়ে ঢাবি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ নাকির জানান, এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। বিক্রেতা ছাড়াই চলে দোকান-এমনটি সচরাচর দেখা যায় না। এছাড়া, এটি শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরীর পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষাও দেবে বলে মনে করছি।

উল্লেখ্য, অনেক শিক্ষার্থীই জানিয়েছেন নিজে কতটুকু সৎ এর জানান দেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে এই প্লাটফর্ম। কোনো দোকানদার এতে নেই তাই সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা পাওনা পরিশোধ করা শিখবে৷ আইডিয়াটা সত্যিই সুন্দর ও প্রশংশনীয়।


সর্বশেষ সংবাদ