চবিতে এক যুগে ১৬ জনের আত্মহত্যা

আত্মহত্যা
আত্মহত্যা  © প্রতীকি ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সোমবার শাহজালাল হলের বিপরীতে এস আলম কটেজের ২১২ নম্বর কক্ষ থেকে অনিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের পাশে পাওয়া যায় ৬ পৃষ্ঠার একটি চিরকুট। পুলিশ জানায়, রোববার রাতের কোনো এক সময় আত্মহত্যা করেন অনিক। তবে শুধু এই ঘটনাই নয়। গত এক যুগে অন্তত ১৬ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

এর আগে সাদা কাগজের ওপর অস্পষ্ট ভাষায় আত্মহত্যার কথা লিখে নিজের জীবন শেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক চাকমার। ২০০৮ সালে লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলামের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছর আত্মহত্যা করেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অ্যান্ড্রু অলক দেওয়ারি। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর দিদারুল আলম চৌধুরীসহ ৮ জন। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনো ছাত্র-শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। তবে ২০১৭ সাল থেকে আবার বাড়তে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতা। ওই বছরের ৭ মার্চ ফ্যানে ঝুলন্ত বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আত্মহত্যার বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হুট করেই তাঁরা জীবনের ইতি টানছেন। কারণ খুঁজতে গিয়ে কোথাও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, কোথাওবা জীবন-জীবিকার সংকট সামনে আসছে।

মনোবিদরা বলছেন, চাওয়ার সঙ্গে না পাওয়ার দ্বন্দ্ব, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, রোগ-বালাইয়ের জের থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই অনেক সময়ই মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। সেই চাপ থেকেই নিজেকে শেষ করে দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘আত্মহত্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখতে প্রতি বিভাগে মাসে অন্তত একবার হলেও কাউন্সেলিং করা উচিত। পরিবারকেও নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে। সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় আড্ডা দিচ্ছে এসব তদারকি করা দরকার তাঁদের।’

২০১৮ সালের ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রকোপ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় এই সেবা। এর আগে এই সেন্টারে সেবা নেন শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

এই সেবা শিক্ষার্থীদের জন্য খুব কার্যকরী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এই সেবা বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই আমরা আবার চালু করব।’

এর আগে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। এরপর প্রতিটি বিভাগে একজন শিক্ষককে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট। সে অনুযায়ী বিভাগগুলোতে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্র উপদেষ্টারা কাউন্সেলিংয়ের বিষয়ে কোনো কর্মসূচি করেছেন এমনটি চোখে পড়েনি তাদের। 

 


সর্বশেষ সংবাদ