সড়ক দুর্ঘটনায় চবি ছাত্রীর মৃত্যু, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭ PM , আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১১ PM

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রী রেহেনা আক্তার তানিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর বিচার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় তারা ‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাই চাই’; ‘সড়ক সড়ক সড়ক চাই, নিরাপদ সড়ক চাই’; ‘বিচার চাই বিচার চাই, বোন হত্যার বিচার চাই’; ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিভাগের ৫৫ ব্যাচের ছাত্রী তনজিহা বিনতে কবির বলেন, ‘আজকে আমরা অনেক শোকাহত, তানিয়া আপুর সকল সম্ভাবনা একনিমিষেই শেষ হয়ে গেল। এটি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এর দায় রাষ্ট্রের। অধিকাংশ ড্রাইভারদের লাইসেন্স নেই এবং তাদের মধ্যে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় এই দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। তার মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। তানিয়া আপুর পরে যেন আর কারো রাস্তায় প্রাণ দিতে না হয়।’
তানিয়ার সহপাঠী ঈসমীতা আক্তার বলেন, ‘আমি ডিপার্টমেন্টে ৬ বছর সিআর ছিলাম। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। গত একটি অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। তার ছবি-ভিডিওগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। এভাবে একজন সহপাঠীকে হারানোয় আমরা ভীষণ মর্মাহত।’
সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক জনাব সদরুল আলম কনক বলেন, ‘তানিয়ার মতো শত শত মানুষ এভাবে রাস্তায় নিহত হচ্ছেন। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রের কোন মাথা ব্যথা নেই। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরতে পারবো কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। হাটহাজারী থেকে অক্সিজেনের রাস্তায় প্রচুর যানজট। সরু এ রাস্তায় অনেকগুলো দোকান বসানো। মানুষের কাজই যেন রাস্তায় যাওয়া, আর প্রাণ হারিয়ে আসা। এরপরে হয়তো পরিবর্তন হবে, কিন্তু তানিয়ার জীবন আর ফিরে আসবে না।’
এ সময় সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৮ তারিখে তানিয়াসহ আমরা একসঙ্গে মাস্টার্সের বিদায় অনুষ্ঠানে কেক কেটেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই। দুর্ঘটনা ঘটার রাস্তায় কোন ডিভাইডার নেই। এ পর্যন্ত ২২জন প্রাণ হারিয়েছে একই রাস্তায়। বেশিরভাগ ড্রাইভারদের লাইসেন্সও নেই। তানিয়ার মৃত্যুর জন্য প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন থেকে তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। এরপরে আর যেন কোন তানিয়ার এভাবে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাতে না হয়।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘প্রক্টর হিসাবে ব্যক্তিগত ভাবে পাবলিকলি শোকবার্তা প্রকাশ করেছি। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য যথাসাধ্যভাবে যেখানে যাওয়া দরকার তা আমি নিশ্চিত করবো। ক্ষতি পূরণের জন্য হায়ার অথরিটি সাথে দ্রুত কথা বলে এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের জন্য ফটিকছড়ি প্রশাসনের সাথে দ্রুত কথা বলবো।
মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা শহিদ মিনার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। এ সময় তারা প্রক্টর বরাবর ৪দফা দাবি পেশ করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাটের আজম সড়কে চট্টগ্রামগামী টেম্পুর সঙ্গে বিবিরহাটগামী সিএনজির সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা তিনজন সড়কে ছিটকে পড়েন। স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেহানা আক্তার তানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া, আহতদের মধ্যে পারভেজ নামে এক যুবকের শরীর থেকে হাতের কব্জি আলাদা হয়ে যায়। তাকে উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। আরেক যাত্রী অঞ্জনা দাস গুরুতর আহত অবস্থায় চমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।