জাবি ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের নিয়ম নেই, ক্ষোভ ভর্তিচ্ছুদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় বরাবরই দ্রুত ফল প্রকাশ করলেও নিয়ম নেই পুনঃনিরীক্ষণ করার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছু ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এক হাজার ৮৪৪টি আসনের বিপরীতের আবেদন করেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৮৫১ জন ভর্তিচ্ছু। সে হিসাবে আসনপ্রতি লড়েন প্রায় ১০৮ জন শিক্ষার্থী।

গত ২২, ২৫ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে ‘এ’, ‘সি’ ও ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ৩ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইটি) এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। 

এতে ছেলেদের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পান অভিজ্ঞান পোদ্দার। তার মোট স্কোর ৯৪.৬। অন্যদিকে মেয়েদের মেরিট লিস্টে প্রথম হন রুবাইয়া সুলতানা। তার স্কোর ৯০.২। পরে গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি নাটক-নাট্যতত্ব ও চারুকলা বিভাগের অধীনে ‘সি-১’ ইউনিট এবং কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের দাবি নির্ধারিত টপিকের ওপর দাগানো উত্তরে যুক্তিসম্মত নাম্বার আসেনি। এছাড়া ফলাফল প্রকাশের পরে ফল পুনঃনিরীক্ষণ বা চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ না থাকায় ভর্তিচ্ছু ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ছেলেদের ফলাফলে  সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ৯১ নাম্বার পেয়ে প্রথম হন শাহরিয়ার প্রত্যয়। অন্যদিকে ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়ে শুভ্রা আলি মোট ৮৪ নম্বর অর্জন করেন। সর্বশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকাশ হয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিট ও জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ফলাফল। এছাড়াও একইদিনে প্রকাশ করা হয় আইবিএ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের ফলাফল। 

‘বি’ ইউনিটে ছাত্রদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি মোট ৮৩ নম্বর পেয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মোসাম্মৎ মারিয়া জাহান। তিনি ৭৪ দশমিক ২০ নম্বর পেয়েছেন। ‘ডি’ ইউনিটে ছাত্রদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন রেদোয়ানুল হক মারুফ। তিনি ৮৯ দশমিক ৬০ নম্বর পেয়েছেন। ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন ফাহরিমা ইউসুফ ইলমা। তিনি ৯০ দশমিক ৮০ নম্বর পেয়েছেন। 

এ ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের দাবি নির্ধারিত টপিকের ওপর দাগানো উত্তরে যুক্তিসম্মত নাম্বার আসেনি। এছাড়া ফলাফল প্রকাশের পরে ফল পুনঃনিরীক্ষণ বা চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ না থাকায় ভর্তিচ্ছু ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তিচ্ছু আজিম উদ্দীন বলেন, আমি ‘ডি’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছি এবং আত্মবিশ্বাস আছে। পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। কিন্তু ফলাফলে যা নম্বর এসেছে, তা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বায়োলজি প্রশ্নগুলো আমি সর্বোচ্চ নিশ্চিত হয়ে দাগিয়েছিলাম। অথচ সেখানেই আমার সবচেয়ে কম নম্বর এসেছে। অন্যদিকে কেমেস্ট্রি অনেক কম দাগানোর পরও সেখানে নম্বর প্রত্যাশার বাইরে এসেছে।

আরো পড়ুন: চবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

আরেক ভর্তিচ্ছু সামিয়া ইসলাম বলেন, আমি ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের একটা প্রশ্ন দাগিয়ে ৫.৪ নম্বর পেয়েছি। অন্যদিকে অনেকগুলো ম্যাথ শিওর দাগিয়ে ২.৬ পেয়েছি। এজন্য রেজাল্ট নিয়ে আমি সম্পূর্ণ অসন্তুষ্ট। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম বলেন, জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট বৈষম্যের ব্যাপারটি বরাবরই আলোচনায় থাকলেও এবার ফলাফলে অসঙ্গতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায়। অনেক পরীক্ষার্থীই তাদের দাগানো প্রশ্ন অনুযায়ী অসঙ্গতিপূর্ণ নাম্বার পেয়েছে।  আবার অনেকে কোনো বিষয়ে শিওর দাগিয়েও প্রত্যাশামতো নম্বর পায়নি। এবারের পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণে যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলাফল যাচাইয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকার কথা নয়। তা সত্ত্বেও যদি কোনো পরীক্ষার্থী তার ফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন বরাবর অভিযোগ জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডীন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ফল নিয়ে সংশয় থাকলে ভর্তিচ্ছুরা সংশ্লিষ্ঠ অনুষদের ডিন বরাবর আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আমরা ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ