ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলেই তোড়জোড়, হলে নিয়োগ হয় না মনোবিদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

সর্ম্পক ভেঙে যাওয়া, পারিবারিক কলহ, ক্যারিয়ারসহ নানা কারণে হতাশায় ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এ হতাশা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে মনোবিদ বা সাইকোলজিস্ট নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সব সময় উদাসীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পার হলেও ছেলেদের ১৩টি হলসহ দুটি হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো মনোবিদ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যায় বিনামূল্যে কাউন্সেলিং সেবা দিচ্ছে ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতর। কিন্তু সেটি ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল। 

কিছুদিনের ব্যবধানে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গত সেপ্টেম্বর মাসে মনোবিদ নিয়োগের উদ্যোগ নেন হলের প্রভোস্টরা। প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল বাছির তখন জানিয়েছিলেন, প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- হলে শিক্ষক হিসেবে মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর পদে মনোবিদ নিয়োগ দেওয়া হবে। সাইকোলজি বিভাগের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের হাউজ টিউটরের মতো করে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে তার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে সমস্যায় ভুগলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে সেবা নিতে পারেন। মেয়েদের হলগুলোয় কনসালট্যান্ট আছেন। যেখানে বিনামূল্যে সেবা মেলে। কলা ভবনের পাঁচতলায় ড. নসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপিতেও সেবা দেওয়া হয়। অবশ্য সেখানে প্রতি সেশনে ৮০০ টাকা দিয়ে যে কেউ সেবা নিতে পারেন।

তবে এসব জায়গা থেকে সেবা নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। এ সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন মাত্র ৪৮১ জন শিক্ষার্থী। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা নগণ্য। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গড়ে সেবা নিয়েছেন ৪২৮ জন শিক্ষার্থী।

এ শিক্ষাবর্ষগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট গড় শিক্ষার্থী ছিলেন ৪৫ হাজার ৯৫৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক সেবা গ্রহীতার সংখ্যা অনেক কম।

২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন মাত্র ৪৮১ জন শিক্ষার্থী। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা নগণ্য। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গড়ে সেবা নিয়েছেন ৪২৮ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে সম্প্রতি ছেলেদের প্রতিটি হলে শিক্ষক হিসেবে মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর পদে একজন করে মনোবিদ নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেটা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের হলের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে হতাশায় থাকে। কেউ প্রেমঘটিত বিষয়, কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় আছে। কিন্তু হলের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। এখন চারদিকে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে জোর দেওয়া প্রয়োজন।’ 

আরো পড়ুন: মাস না পেরোতেই ঢাবির হলে দুই ছাত্রের মৃত্যু, নড়েচড়ে বসলো প্রশাসন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক জোবেদা খাতুন বলেন, ‘কোভিডের পর থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। কারণ বিভিন্ন সম্পর্ক ভেঙে গেছে; মানুষের সাথে যোগাযোগ কমে গেছে। এছাড়াও আমাদের তরুণদের ভালো চাকরির অপ্রতুলতা রয়েছে। এতে করে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এ বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে হল প্রভোস্ট ও শিক্ষার্থী উপদেষ্টাদের সাথে মিটিং করেছি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে টিএসসিতে যে পরামর্শদানকেন্দ্র আছে সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে একটা খসড়া আসবে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সামগ্রিক কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা থাকবে। এরপরই কার্যক্রম শুরু হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ