ঢাবির ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা

অভিজ্ঞতার কথা জানালেন প্রথম হওয়া সিয়াম

মেফতাউল আলম সিয়াম
মেফতাউল আলম সিয়াম  © ফাইল ছবি

একদিন পরেই আগামী শুক্রবার (১০ জুন) ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ সেশনে স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভর্তিচ্ছুদের হাতে সময় আর মাত্র দুইদিন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মেফতাউল আলম সিয়াম গত বছর একাধারে আইইউটি-বুয়েট-ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। এবারের ভর্তিযুদ্ধের আগে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কিছু গাইডলাইন দিয়েছেন তিনি।  

সিয়াম জানান, আমার কাছে সব থেকে মজার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা। পরীক্ষার শুরু থেকে রেজাল্ট পর্যন্ত পুরোটাই দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন।

“পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম রাজশাহীতে, বোর্ডিং ছিলাম আগের রাত। পরীক্ষা ছিল পরদিন বেলা সকাল ১১টায়। তাই রাত ১টার দিকেই বিছানায় গিয়েছিলাম। িকিন্তু ফজরের আযান পর্যন্ত এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। শেষ-মেষ উঠে নামাজ পরে আল্লাহর কাছে একটা জিনিসই চাইলাম, আল্লাহ আমাকে অন্তত ২ ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ করে দাও, নাহলে কালকের পরীক্ষা ভালো দিতে পারবো না। যাই হোক তারপর প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো ঘুম হয়েছিল। ঠিক সময়েই হলে পৌঁছে গেলাম, কেন্দ্র ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

সিয়াম বলেন, প্রথমে এমসিকিউ এবং পরে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। এমসিকিউ ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি ও গণিত এই ক্রমে দাগিয়েছিলাম। লিখিত পরীক্ষায় যে সিরিয়ালে ছিল সেভাবেই লিখা শুরু করেছিলাম। ফলাফল প্রায় এক মাস পর নভেম্বর এর তিন তারিখে বেলা সাড়ে ১২র দিকে প্রকাশ হয়েছিল। এখন একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি। নভেম্বর এর ছয় তারিখ ছিল আমার বুয়েট লিখিত পরীক্ষা, তাই ৩ তারিখ মাথার চুল কাটতে গিয়েছিলাম সেলুনে। ওই দিনই রেজাল্ট পাবলিশ করার কথা ছিল। যে রেজাল্টে ঢাবির ১০০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড মার্কস পেয়েছি সেই ফলাফলের খবর পেয়েছি সেলুনে বসে চুল কাটারত অবস্থায়!

তার মতে, ভর্তি পরীক্ষায় যত পরীক্ষা দিয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্যান্ডার্ড ছিল ঢাবি আর বুয়েটের প্রশ্নপত্র দুটো। ব্যক্তিগতভাবে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষাকে আমার দেড় ঘণ্টার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা বলে মনে হয়। আমার এমসিকিউ পূরণ করা শেষ হয়েছিল ৪৫ মিনিট পার হওয়ার সাথে সাথে, আর লিখিত শেষ উত্তরটাও লেখা শেষ হয়েছিল স্যার স্টপ রাইটিং বলার সাথে সাথে। তাই বোঝাই যাচ্ছে অনেক কম সময় পাওয়া যায় পরীক্ষায়।

অনেকে পারা জিনিসও সময়ের অভাবে পরীক্ষার হলে করতে পারে না। তাই টাইম ম্যানেজমেন্ট এই পরীক্ষার জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় একটা কথা বলি যে, পরীক্ষার হলে অবশ্যই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটা স্ট্রাটেজি নিয়ে যেতে। বায়োলজি ভালোভাবে জানা থাকলে এখান থেকে তুলনামূলক একটু বেশি সময় বাঁচানো যায়, যেটা গণিত আর ফিজিক্স এ কাজে লাগানো যেতে পারে। জানা প্রশ্নগুলো আগে সমাধান  করবে, কঠিন জিনিস এ অযথা প্রথমে সময় নষ্ট করা ভালো স্ট্রাটেজি না।

লিখিত অংশের ক্ষেত্রে লিখার গতি একটু বেশি থাকলে সুবিধা হবে, নাহলে অনেক ক্ষেত্রে পারা জিনিসও লিখার সময় পাবে না। পরীক্ষার আগে যেই কয়েকদিন বাকি আছে সেই দিনগুলোতে ক্যাল্কুলেটর ছাড়া হিসাব করার গতি বাড়াতে পারো। ঢাবির বায়োলজিতে সবসময় বৈজ্ঞানিক নাম থেকে কিছু প্রশ্ন থাকেই, তাই ওই অংশগুলো পরীক্ষার আগে দেখে যেতে পারো, শ্রেণিবিন্যাস থেকেও প্রায়ই প্রশ্ন আসে। 

কেমিস্ট্রি লিখিত অংশে একটু দীর্ঘ প্রশ্ন আসে, তাই ওখানে একটু বেশি সময় লাগে। ফিজিক্স আর গণিত অংশটুকু জানা থাকলে এখানে ভালো সময় বাঁচানো যায় যেটা কেমিস্ট্রি আর বায়োতে কাজে লাগাতে পারবে। 

পরীক্ষার আগে একটু মিষ্টি জিনিস খেয়ে যেতে পারো, মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ সরবরাহ পাবে। চেষ্টা করবে পরীক্ষার হলে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দেখানোর।

আর একটা বিষয় একটু গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করবে যদিও এবারের পরীক্ষার ধরণ কেমন হবে তা জানি না। আমাদের সময় MCQ ও লিখিত প্রশ্ন একসাথে ছিল আর OMR প্রশ্নপত্রের ভিতর ঢুকানো ছিল। কোনো ক্রমেই OMR যেন অন্য কোনো প্রশ্নের OMR এর সাথে এক্সচেঞ্জ না হয়। যদি নাম রোল লিখতে ভুল হয় তাহলে শুধু OMR না পুরো প্রশ্নসহ OMR পরিবর্তন করে নেবে। নয়তো অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েও হয়ত তোমার ভালো ফল নাও আসতে পারে। সবার জন্য শুভকামনা রইল।


সর্বশেষ সংবাদ