উচ্চশিক্ষা: কেন পড়বেন সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে?

অধ্যাপক মো: ইমরান হোসেন ভূইয়া
অধ্যাপক মো: ইমরান হোসেন ভূইয়া  © টিডিসি ফটো

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে যারা মানবিক বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য থাকে মূলত সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা। তবে মানবিক বিভাগের বাইরেও, উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখায় পড়াশোনা করেও অনেকে পরবর্তীতে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো তার বহুল প্রায়োগিক গুরুত্বের কারণে অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও সমাদৃত বলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর বিশেষ কদর রয়েছে।

একজন শিক্ষার্থী কেন সমাজ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়বে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও ক্যারিয়ার কেমন, সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: ইমরান হোসেন ভূইয়া। এই পরামর্শের বিস্তারিত তুলে ধরছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার-

যেসব বিষয় রয়েছে সামাজিক বিজ্ঞানে
সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে একদিকে রয়েছে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান। অন্যদিকে রয়েছে লোক প্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়। তার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে আন্তর্জাতিক চাহিদা ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রয়েছে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, পপুলেশন সায়েন্সেস, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন, ক্রিমিনোলজি, জাপানিজ স্টাডিজ, যোগাযোগ বৈকল্য, টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি এবং প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ।

যারা সামাজিক বিজ্ঞানের প্রথাগত ও ঐতিহ্যবাহী বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান,  নৃবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-এর মতো সব বিষয়। আর যারা আন্তর্জাতিক চাহিদা ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চ্যালেঞ্জিং ও প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চান, তারা পড়তে পারেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, পপুলেশন সায়েন্সেস, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, ক্রিমিনোলজি, জাপানিজ স্টাডিজ এবং টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফির মতো সব বিষয়। এখানে, আধুনিক সব বিষয়গুলোতে পড়ার একটি বড়ো সুবিধা হচ্ছে যে, এই বিষয়গুলো অনেক বেশি প্রায়োগিক ও আন্ত:শাস্ত্রীয় বা ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি।

যেভাবে পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যারা মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়েছেন তারা তো বটেই, যারা বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে পড়েছেন, তারাও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য যে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক শাখা থেকে আসা  শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং উত্তীর্ণ হলে তার মেধাক্রম অনুযায়ী পছন্দের বিষয় নির্বাচন করতে পারেন। 

অপরদিকে, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখা থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষা অথবা সকল শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ যে ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় রয়েছে সেই ইউনিটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে পারেন। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের স্নাতকদের জন্য অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর পর বিশ্বব্যাপী সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক স্কলারশিপের সুযোগ অনেক বেশি। বাণিজ্য ও কলা অনুষদের বিষয়গুলোর চেয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে বিদেশে অনেক বেশি বহুমাত্রিক বিষয়ে পূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ও পরিবেশগত উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ অবারিত। 

সামাজিক বিজ্ঞানের স্নাতকদের মধ্যে অর্থনীতি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে অর্থনীতির বিভিন্ন শাখা যেমন পরিবেশ অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, শ্রম অর্থনীতি, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, কৃষি অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি, ও পাবলিক পলিসি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকেন বেশি। তবে, সকল সামাজিক বিজ্ঞান স্নাতকেরাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, রাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, পাবলিক পলিসি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন,  প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার ও উন্নয়ন, মিডিয়া স্টাডিজ, গণযোগাযোগ, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, ফিল্ম স্টাডিজ, ও ক্রিমিনোলজি-এর মতো বিষয়গুলোতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন খুব সহজে।

চাকরি ও ক্যারিয়ার
ক্যারিয়ারের দিক থেকে বিবেচনা করলে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, এবং দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থায় কাজের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োগ করা যায়। 

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতকেরা বিশ্বব্যাপী তার উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ও উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাছাড়া, গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা, টেলিভিশন, ও ফিল্ম এর মতো বিশেষায়িত বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য স্নাতকেরাও আধুনিক মিডিয়া খাতগুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। 

তবে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে যেকোনো খাতে ক্যারিয়ার গড়তেই সামাজিক বিজ্ঞানের স্নাতকদের তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের দক্ষতা থাকা বেশ জরুরি। তাই, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা ও ইংরেজি কিংবা ফরাসি ভাষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা থাকলে চাকরিক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের স্নাতকেরা সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি নানান প্রতিষ্ঠানেই চাকুরি ও গবেষণার সুযোগ পেয়ে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ