‘গিবলি’ নিয়ে উত্তাল স্যোশাল মিডিয়া— বিষয়টি আসলে কী? কোথা থেকে পেল তার নাম ও জনপ্রিয়তা

জুলাই আন্দোলনের গায়েবানা জানাযার ছবিতে গিবলি
জুলাই আন্দোলনের গায়েবানা জানাযার ছবিতে গিবলি  © সংগৃহীত

ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম খুললেই এখন একটাই ছবি, গিবলি। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ট্রেন্ডিং গিবলি। সবাই নিজের অ্যানিমেশ ছবি তৈরি করতেই ব্যস্ত। সেলিব্রেটির ছবি থেকে শুরু করে নিজস্ব ছবি, জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা আন্দোলন— সবাই এখন গিবলিতে মাতছে। অনেকে আবার বুঝতেই পারছেন না এই গিবলি কি? খায় না মাথায় দেয়। অনেকেই আবার উত্তর খুঁজছেন, কীভাবে তৈরি করতে হবে এই গিবলি আর্ট?

দেখেশুনে নতুন ‘ট্রেন্ড’-এ গা ভাসাতে ইচ্ছে হয়নি কি আপনারও? হয়তো খুঁজেও ফেলেছেন গুগলে। কীভাবে বানাবেন নিজের গিবলি অবতার। কিন্তু যা নিয়ে এত মাতামাতি, সেই ‘গিবলি’ আসলে কী বস্তু? কোথা থেকে পেল তার এমন বিদঘুটে নাম? সেই নামের অর্থই বা কি? কেন এবং কী ভাবে জনপ্রিয় হল গিবলি শিল্প? 

গিবলি কী?
জাপানি উচ্চারণে জিবলি আর ইতালি উচ্চারণে গিবলি। গিবলি আসলে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিওর নাম। যার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে, জাপানের টোকিওতে। উজ্জ্বল জলরং অথবা অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে হাতে আঁকা হত ওই স্টুডিওর সমস্ত অ্যানিমেশন। খামখেয়ালি কল্পনায় আঁকা সেই সমস্ত ছবি থেকে ফটো বের হতো অজানা সুখানুভূতি। সম্ভবত সেই বিষয়টিই দর্শকদের মন টানে। জাপানের ওই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছোয় অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। ওয়াল্ট ডিজনি অংশীদারির প্রস্তাব দেয় গিবলি স্টুডিয়োকে। কার্টুন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে গিবলি।

গিবলি নামের অর্থ কী?
গিবলি নামের নানারকম অর্থ হয়। নানা দেশে এর ব্যবহারও রয়েছে। তবে গিবলি (জিবলি) শব্দটির সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ মেলে আরব দেশে। আরবি শব্দ ‘জিবলি’ ব্যবহার করা হয় সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত এবং শুষ্ক হাওয়াকে বোঝানোর জন্য। গিবলি স্টুডিওর তিন প্রতিষ্ঠাতার প্রধান যিনি, সেই জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজাকি অবশ্য ওই নাম বেছে নিয়েছিলেন ইতালির একটি বিমানের নাম থেকে।

বিমানের নামে কার্টুন!
ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইতালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল গিবলি। বিমান নিয়ে আগ্রহী মিয়াজাকি সেই নাম জেনেছিলেন। নামের মানে জেনে আরও ভাল লেগেছিল তার। নিজের স্টুডিও তৈরি করার সময় তাই বেছে নিয়েছিলেন সেই নামই। জাপানি উচ্চারণে যা হয়েছিল জিবলি (ইতালি উচ্চারণে গিবলি)। মিয়াজাকি চেয়েছিলেন, গিবলি তার নামের অর্থের মতোই অ্যানিমেশনের দুনিয়ার পালে নতুন হাওয়া নিয়ে আসুক।

গিবলির জনপ্রিয়তা
গিবলির জনপ্রিয়তা কতখানি, তার একটি হিসাব দেওয়া যাক। গত ৩৮ বছরে হাতেগোনা ২২টি ছবি তৈরি করেছে গিবলি স্টুডিয়ো। টেলিভিশনের জন্য বানিয়েছে ৩টি ছবি। আর সেই সব ছবির প্রত্যেকটিই অ্যানিমেশন দুনিয়ায় আদৃত। জাপানের যে প্রথম দশটি ছবি আজও ব্যবসা দেয় এবং সর্বকালের সেরা ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে চারটিই গিবলি স্টুডিয়োতে তৈরি। গিবলির ছবি অস্কার, গোল্ডেন বিয়ার, বাফতা, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও জিতেছে একাধিক বার। 

২০২৪ সালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির শিরোপা উঠেছে গিবলি স্টুডিওরই তৈরি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ ছবির মাথায়। গিবলির তৈরি ছবি ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ হল প্রথম ‘নন-ইংলিশ’ অ্যানিমেশন ছবি, যা মূল বিভাগে অস্কার জেতে। ২০২১ সালে গিবলির জনপ্রিয়তা দেখে টোকিওতে গিবলি মিউজিয়ামও তৈরি হয়। গিবলির দৌলতে মিয়াজাকি ২০২৪ সালে এশিয়ার ‘নোবেল প্রাইজ ‘র‌্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কারও পান।

গিবলির ট্রেন্ড
সম্প্রতি ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তারা তাদের ছবি গিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। বিষয়টি জানার পরেই চ্যাটজিপিটির নতুন সুবিধাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। 

ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন তারা। সেই সময়েই গিবলি আর্টের কথা তাদের মাথায় আসে। ওই প্রযুক্তি প্রকাশ্যে আনার পরেই চাহিদা তুঙ্গে ওঠে চ্যাটজিপিটির। 

অল্টম্যানের কথায়, গিবলি ছবির চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে চ্যাটজিপিটির গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিটের এখন-তখন দশা। তবে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছিল, তা যে সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।

সূত্র: আনন্দবাজার


সর্বশেষ সংবাদ