প্রথম স্থান নিয়ে শেষ শিক্ষাজীবন, কৃষকপুত্র এনায়েত এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

মো. এনায়েত হোসেন।
মো. এনায়েত হোসেন।  © টিডিসি ফটো

ছোটবেলা থেকেই বাবার কৃষি কাজে সাহায্য করতে গিয়ে পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল চাষ করেছি। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে হাল চাষ করতে গিয়ে পাওয়ার টিলার দুর্ঘটনায় ডান হাতের বাহুতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিলো। তবুও আমি থেমে যাইনি।’

এভাবেই নিজের অতীতের কথা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন সদ্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ এন্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এনায়েত হোসেন।

তিনি বলেন, দুর্দান্ত পরিশ্রম করে মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ হতে জিপিএ ৪.৭৫ সঙ্গে সরকারি মেধা বৃত্তি পেয়েছিলাম। কৃষক বাবার দুঃখ ঘোচাবো- এই প্রত্যয় নিয়ে নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলেও দিকনির্দেশনার অভাবে অসহায় আমি ঢাকা ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছিলাম ফরিদপুরের সরকারি ইয়াছিন কলেজে।

এনায়েত হোসেনের শৈশব কেটেছে কৃষক পরিবারে। ফরিদপুর জেলার মোলামের ডাঙ্গী গ্রামে বেড়ে উঠেছেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনিসহ চারজন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

স্বপ্ন পূরণের শুরুটা কিভাবে জানতে চাইলে এনায়েত বলেন, জীবনে অনেক বড় কিছু হতে হবে। এই প্রত্যয়ে শ্রদ্ধেয় স্যারদের দিকনির্দেশনায় পুরো কলেজ জীবনে প্রথম স্থান নিয়ে শেষ করেছি। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তির পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।

‘‘সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবং কৃষক বাবার পাশে দাঁড়াবো এই অনুপ্রেরণায় রাতদিন পরিশ্রম করে নোট করেছি, পড়াশোনা করেছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় কখনও হয়ে ওঠেনি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আদর ও ভালোবাসায় আরো বেশি পরিশ্রমী হয়ে উঠেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান ধরে রেখেছিলাম। তার ধারাবাহিকতায় স্নাতকে ৩.৬২ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৭৬ পেয়ে পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উভয় পর্যায়েই মেধাবৃত্তি পেয়েছিলাম।

মো. এনায়েত হোসেন

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক হবো এই স্বপ্নটা আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেই উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। এছাড়াও গবেষণায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে আমি আমার বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম স্যারের অধীনে এম ফিল প্রথম পর্ব শেষ করি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে থাকি। অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছি; কিন্তু হাল ছাড়েননি।

আরও পড়ুন: ‘প্রথম সেমিস্টারেই প্রথম হই, তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন’

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এই প্রভাষক এনায়েত বলেন, বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। তাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. খাদিজা খাতুন, আমার মত একজন কৃষক সন্তানকে আশ্রয় দিয়েছেন নিজের সন্তানের মত করে। দিয়েছিলেন দিক নির্দেশনা।

এনায়েত হোসেনের স্বপ্ন পূরণে যারা তার পাশে ছিলেন তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ড. খোদেজা খাতুন ম্যাম ছাড়াও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খুব কাছের শিক্ষকদের পরামর্শ অনুপ্রেরণা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণের সিড়ি ছিলো। আমার এলাকার কয়েকজন বড় ভাইদের অনুপ্রেরণ, প্রচেষ্টা পেয়েছি সর্বদা। 

কৃষক পরিবার থেকে বেড়ে উঠা এনায়েত হোসেন এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এখন তার একমাত্র লক্ষ্যে, গ্রামের কোন কৃষকের সন্তানেরা যেন পড়ালেখা থেকে ঝরে না পড়ে। এটা নিয়ে তিনি কাজ শুরুর বেশকিছু পরিকল্পনা তিনি ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ