একসাথে প্রস্তুতি, একসাথে বিসিএস—দুই রুমমেটের বিসিএস জয়ের গল্প

মো. মিঠু রানা ও মো. রশিদুল ইসলাম
মো. মিঠু রানা ও মো. রশিদুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন মো. মিঠু রানা ও মো. রশিদুল ইসলাম। দুজনেই স্বপ্ন দেখতেন বিসিএস ক্যাডার হবেন। সেই লক্ষ্যে অ্যাকাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি একসঙ্গে নিয়েছেন বিসিএসের প্রস্তুতি। পেয়েছেন সাফল্যও। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে দুজনই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

মো. মিঠু রানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী। আর মো. রশিদুল ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের যে কক্ষটিতে তারা থাকতেন, তারা সে কক্ষটির নাম দিয়েছিলেন—‘লাইসিয়াম’।

মো. মিঠু রানা এখন শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও একটা সময় তিনি ছিলেন বিসিএসের ঘোর বিরোধী। রুমমেটের বিসিএস প্রীতি দেখে তিনি নিজেও এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। শুরু করেন নিজের প্রস্তুতি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলে উঠার পর থেকে আমার রুমমেট রশিদুল ইসলামের বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে আগ্রহ ও প্রস্তুতি আমাকে অবাক করেছে।

তিনি বলেন, রশিদুল যখন পড়ালেখা শুরু করে তখনও আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, আড্ডা, ঘোরাঘুরি—এসবের মধ্যে ডুবে ছিলাম। রশিদুলকে দেখেই মূলত সিভিল সার্ভিসের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ জন্মায়। এরপর থেকে আমিও প্রস্তুতি শুরু করি। এখন খুব ভালো লাগছে যে, দুজন একসঙ্গে একই বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।

রুমমেট মিঠুর সঙ্গে সুপারিশ পেয়ে খুশি রশিদুলও। তিনি বলেন, এটা অনেক সৌভাগ্যের। আমরা দুজন রুমমেট একসঙ্গে একই বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। কারণ, এমনটি সচরাচর দেখা যায় না।

‘লাইসিয়াম’ থেকে শুধু মিঠু আর রশিদুল নয়, তাদের আগে ৪১তম বিসিএসে মাসুদ নামে মিঠুদের আরেক রুমমেট পেয়েছিলেন প্রশাসন ক্যাডার। আরেক রুমমেট শামীম আহমেদ ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রুমমেটরা সবাই একে অন্যের সহযোগী হওয়াতে এমন সাফল্য অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন রশিদুল। তিনি বলেন, আমরা চারজনই খুব হেল্পফুল ছিলাম। সবাই বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। এখন তা বাস্তবে রূপ দিতে পেরে খুবই আনন্দিত।

মিঠু রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে থিসিস গ্রুপ থেকে ৩য় স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে তিনি ১২তম হয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ৩৩তম। তখন তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন সমাজবিজ্ঞানে।

হলের রুমে বিসিএসের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মিঠু বলেন, আমি গণিতে একটু দুর্বল ছিলাম। তাই গণিত নিয়ে কোনো সমস্যা হলে রুমমেটের কাছ থেকে সমাধান করে নিতাম। তবে ইংরেজিতে আমার বেশ দখল ছিল। বিশেষত গ্রামার নিয়ে যেকোনো সমস্যা হলে রশিদুল আমার কাছ থেকে জেনে নিত।

নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে পত্রিকা-ম্যাগাজিন পড়ারও অভ্যাস ছিল তাদের। মিঠু বলেন, দুজনে হলের পত্রিকা রুমে অন্তত দুই ঘণ্টা পত্রিকা পড়তাম। পরে রুমে এসে আবার তা নিয়ে আলোচনা করতাম। আমাদের যেকোনো ধরনের আড্ডাও এক পর্যায়ে এসে বিসিএস সম্পর্কিত আলোচনায় রূপ নিত। আসলে এভাবেই সমন্বিত প্রস্তুতিতে সফলতা সম্ভব হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ