এবার অ্যাডমিন ক্যাডার হলেন ঢাকা মেডিকেল ছাত্রী জেরিন

জেরিন সিকদার
জেরিন সিকদার  © টিডিসি ফটো

জেরিন সিকদার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করা এই ছাত্রী ৪২তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবার ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারে। ছোটবেলায় নাসাসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজের ইচ্ছা থাকলেও জেরিন আজ সরকারি চাকরির প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। পূরণ করেছেন বাবা-মায়ের স্বপ্নও। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন জেরিন। 

জানা যায়, জেরিন সিকদারের দাদার বাড়ি শরিয়তপুর। যদিও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছোটবেলায় নির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন না থাকলেও একটা সময় নাসায় চাকরি করার ইচ্ছে ছিল। কখনও কখনও স্বপ্ন দেখেছেন অ্যারোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আবার অনেক সময় ভাবতেন, গুগলে চাকরি করবেন। তবে মেডিকেলের শেষবর্ষে এসে লক্ষ্য স্থির করেলেন— বিসিএস দেবেন। সেই লক্ষ্য থেকে ৪২তম বিসিএসে অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য ক্যাডার হওয়া।

জেরিন সিকদার বলেন, সফলতার পেছনে সবার আগে কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর প্রতি। কারণ আমি মনে করি, আল্লাহ না চাইলে দুনিয়াতে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। অবশ্যই তিনি আমার প্রতি সহায় ছিলেন। তাই আমি এত দূর আসতে পেরেছি।

নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন বাবা-মাকেও। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমি এমন অনেককে দেখেছি, যারা বেশ ভালো ছাত্র-ছাত্রী ও সম্ভাবনাময়ী হওয়ার পরও পরিবারের সাপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। তাই আমি বলব, বাবা-মায়ের সাপোর্ট না থাকলে এতদূর পৌঁছাতে পারতাম না।

জানা যায়, জেরিনের বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। জনতা ব্যাংকের ডিজিএম পদে চাকরির শেষ করে বর্তমানে অবসরে রয়েছেন তিনি। মা শামসুর নাহার গৃহিণী। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট জেরিন। শিক্ষাজীবন সম্পর্কে  জানা যায়, খিলগাঁওয়ের একটা কিন্ডারগার্টেন থেকে জেরিনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু। এরপর ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকেই মেডিকেল পড়াশোনা শেষ করে শুরু করেন বিসিএস প্রস্তুতি।

বিসিএস প্রস্তুতিতে পরিবার থেকেও এক ধরনের চাপে ছিলেন জেরিন। সময়টা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪২তম বিসিএসকালীন সময়ে ইন্টার্নশিপ করছিলাম। ওই সময়েই চার হাজার ডাক্তার নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি আসে। পরিবারের সবাই চেয়েছিল, আমি যেন ওই বিসিএসে অংশ নেই। তাদের ভাষ্য ছিল এমন যে আমি চাইলে পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারব।

মূলত তখন থেকেই ৪২তম বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন জেরিন। প্রথম দিকে অনলাইনের বিসিএস গ্রুপগুলো অনুসরণ করতাম। এই যাত্রায় আমার সঙ্গে কেউ ছিল না। গ্রুপে ভালো বইয়ের পরামর্শ পেলে সেটা কিনে পড়তাম। কোনো কিছুতে সমস্যা হলে বিশেষ করে গণিতের জন্য সিনিয়রদের সহায়তা নিতাম।  বলা যায়, ইন্টার্নশিপ সময়টাতেই বিসিএসের প্রস্তুতি শেষ করি এবং প্রথম বিসিএসে সাফল্য পাই।

৪২তম বিসিএসে ক্যাডার হওয়ার পর ৪৩তম বিসিএসেও আবেদন করেছিলেন জেরিন। যাতে সফলতা হিসেবে এসেছে প্রশাসন ক্যাডারের সুপারিশ। প্রস্তুতির ধরন সম্পর্কে জেরিনের ভাষ্য, প্রথম বিসিএসে (৪২তম) স্বাস্থ্য ক্যাডার হওয়ার কারণেই ৪৩তম বিসিএসের অনুপ্রেরণা পান তিনি। তখন থেকেই চলতে থাকে জোর প্রস্তুতি। এ সময়ে বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছেন তিনি।

জেরিন বলেন, কোচিং সেন্টারের পরীক্ষাগুলো সবার দেওয়া উচিত। তাহলে বুঝা যাবে, প্রস্তুতি কতটুকু হয়েছে। এখানে নিজের ইচ্ছাটাই জরুরি। এই বয়সে এসে মনে হয় না, কেউ আমাকে এসে ‘মোটিভেট’ করবে। এখানে নিজ ইচ্ছাটাই সবকিছু।

No photo description available.

পড়ালেখার হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও জেরিন যুক্ত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। পড়ালেখা সামলে কীভাবে রাজনীতি করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি করা শুরু হয় কলেজ জীবন থেকে। এছাড়া মেডিকেল লাইফেও বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জেরিন বলেন, আমার মনে হয়েছে পাঁচ বছর পর যে কর্মজীবনে যাব, সেখানে এই এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসগুলোই আমাকে এগিয়ে রাখবে। তাছাড়া রাজনীতি বিষয়টাই আমার ভালো লাগে। এটা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাদের কথা শোনা যায়। তাদের হয়ে কথা বলা যায়। মূলত এসব থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।

জেরিন বর্তমানে ৪২তম বিসিএসের মাধ্যমে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার বর্তমান কর্মস্থল সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমান পেশা কেমন উপভোগ করছেন— এমন প্রশ্নে জেরিন বলেন, চিকিৎসা পেশা ভালোবাসি। রোগি দেখতে এবং তাদের ডিল করতে ভালো লাগে। ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্নশিপ সময়টাও খুব উপভোগ করেছি। যদিও তখন করোনাকাল ছিল। তবুও যার রোগিকে দেখতে ভালো লাগে, তার কাছে ডাক্তারি উপভোগের পেশা বলেই আমার কাছে মনে হয়।


সর্বশেষ সংবাদ