হলের কক্ষে তালা, জয়-লেখক থাকেন বিলাসী ফ্ল্যাটে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:০৫ PM , আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৫০ PM
কথা রাখেননি ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। দায়িত্ব পাওয়ার পর কথা দিয়েছিলেন বিলাসী জীবন থেকে থাকবেন দূরে। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নেবেন না প্রটোকল। ছাত্রলীগের হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনবেন। শুরুর দিকে বাইকে-রিকশায় চড়েই বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তারা। এমন আচরণের জন্য সেসময় তারা প্রশংসিত হয়েছিলেন সর্বমহলে। কিন্তু কিছুদিন পরেই আগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ধারায় তারাও ফিরেছেন। হলের কক্ষ ছেড়ে উঠেছেন বিলাস বহুল ফ্ল্যান্টে। বাইক ছেড়ে এখন চড়েন দামি গাড়িতে।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ তিন কমিটিতেই নেতাদের বিলাসী জীবন নিয়ে সংগঠনের ভেতরে বাইরে সমালোচনা ছিলো। উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবি করার ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পান সভাপতি রেজোয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ওইদিনই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক হন লেখক ভট্টাচার্য। শুরুর দিকে তাদের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের অভিযোগ এরপরই পাল্টে যেতে থাকেন তারা।
আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ সভাপতি বিএনপি পরিবারের সন্তান, অভিযোগ সহ-সভাপতির
সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই দুইজনের চলাফেরায় পরিবর্তন আসে। কিছুদিন পরই হলে নিজেদের কক্ষে অনিয়মিত হয়ে যান জয়-লেখক। এরপর জয় উঠেন নিউমার্কেটের পাশে বিশ্বাস বিল্ডার্সের একটি ফ্ল্যাটে। লেখক উঠেন ইস্কাটন গার্ডেনের একটি বাসায়। করোনা মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধের পর ফ্ল্যাটে পুরোপুরিভাবে থাকা শুরু করেন দুই নেতা। হলে তারা যে কক্ষ দুইটিতে থাকতেন সেগুলো বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। সভাপতি জয় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। আর লেখক ভট্টাচার্য থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের গোবিন্দ চন্দ্র দেব ভবনের ৮৪ নাম্বার কক্ষে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হলে এমনিতে সিট সংকট। থাকতে হয় মসজিদ, টিভি রুমে বা বারান্দায়। সেখানে দিনের পর দিন কক্ষ দুইটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। এ জন্য তারা হল প্রশাসনকে দুষছেন।
এ বিষয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে এখন ছুটিতে আছি। এ ব্যাপারে পরে কথা বলব। জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। এখন শুনলাম। এগুলো তো হাউজ টিউটররা দেখে। আমি খোঁজ নিয়ে জানাবো।
আরও পড়ুন- ৫৭ জনের মধ্যে ১৭ জনই দলছুট
বর্তমানে আল নাহিয়ান খান জয় নিউমার্কেটের পেছনে বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড এর ৬ তলার একটি ভবনের ৯ নম্বর ফ্ল্যাট থাকেন। ফ্ল্যাটটির ভাড়া মাসে অর্ধ লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছেন ভবনটিতে থাকা একাধিক বাসিন্দা। ছাত্রলীগের সভাপতি জয় চলাফেরার জন্য ব্যবহার করেন পাজারো এবং প্রিমিও ব্র্যান্ডের দুইটি গাড়ি। গাড়ি দুইটি তার নিজের কেনা কিনা সেটি নিশ্চত হওয়া যায়নি। গাড়িগুলোর বাজার মূল্য কয়েক লাখ টাকা।
আর লেখক ভট্টাচার্য বর্তমানে থাকেন বাংলামোটরের ইস্কাটন গার্ডেনের গার্ডেন টাওয়ারে। ২০ তলা ভবনের ৯ম তলায় থাকেন তিনি। এই ফ্ল্যাটের ভাড়া অর্ধ লাখ টাকার ওপরে বলে জানান বাসার কেয়ারটেকার। তিনিও কালো কালারের নোয়া গাড়ি ব্যবহার করেন।
এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সোহান খান বলেন, ভারমুক্ত হওয়ার পরই তাদের আচরণ পাল্টে যায়। কেন্দ্রীয় কমিটির বাকীদের বাদ দিয়ে তারা দুইজনই সব করতে থাকেন। বিলাসী জীবন যাপন শুরু করেন। দিনে এক গাড়িতে চললে দেখা যায় রাতে আরেক গাড়িতে চলছেন। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কথা তুলছেন। বর্ধিক সভা করেন না তারা। তাই বাধ্য হয়েই ওপেন প্লেসে কথা বলছেন নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মন ভালো নেই
তিনি আরও বলেন, জয়-লেখক এখন পর্যন্ত যতগুলো কমিটি দিয়েছে সবগুলো কমিটি নিয়েই কথা উঠেছে। ইউনিটগুলোতে বিক্ষোভ হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের কথা শুনি আমরা। ইউনিটগুলোতে তারা সম্মেলন করতে চায় না। কিছুদিন আগে জামালপুরের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো। পোস্টারও ছাপানো হয়। কিন্তু সেই সম্মেলন পরে আর হয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তারা।