জুলাই যোদ্ধা হৃদয়ের দাফন সম্পন্ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৬ PM , আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৯ PM

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে দীর্ঘদিন যন্ত্রণায় ভোগার পর মারা গেলেন মো. আশিকুর রহমান হৃদয়। নিহত এই জুলাই যোদ্ধার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৯টায় তার নিজ এলাকা বাউফল সদর ইউনিয়নের পশ্চিম যৌতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকাল চারটায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হৃদয় ছিলেন বাউফল সদর ইউনিয়নের পশ্চিম যৌতা গ্রামের বাসিন্দা আনসার হাওলাদারের ছেলে।
হৃদয়ের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এই বিপ্লবী সন্তানের জানাজায় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতি জনমনে ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন সহস্রাধিক মুসল্লি। উপস্থিত ছিলেন বাউফল ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল সোবাহান, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি এবং বাউফল উন্নয়ন ফোরাম ও বাউফল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, যিনি সৌদি আরব থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হৃদয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন। তিনি হৃদয়ের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
এছাড়াও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এনসিবির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন। কিন্তু বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
গত বছরের ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন তিনি। মাথায় লাগে তিনটি গুলি। পরে বিভিন্ন সময় লুকিয়ে চিকিৎসা নেন তিনি, কারণ তখন চলছিল স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার দমন-পীড়ন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানকার চিকিৎসকেরা তার মাথা থেকে দুটি গুলি বের করতে পারলেও আরেকটি গুলি থেকে যায়। অবস্থার জটিলতা ও ঝুঁকির কারণে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। সেই গুলিই একসময় প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে হৃদয়ের জন্য। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়তেন, জ্বর আসত, ব্যথায় কাতরাতেন।
গত বুধবার আবারও শরীরে জ্বর আসে হৃদয়ের। শুক্রবার দুপুরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। বেলা তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মারা যান তিনি।
হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার বলেন, ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। নিজের রিকশা আর একটা গরু বিক্রি করে যতটুকু পেরেছি করেছি। ডাক্তাররা দুইটা গুলি বের করলেও একটা মাথার ভেতরে রয়ে গিয়েছিল। যদি কেউ বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করত, আমার ছেলে হয়তো বেঁচে যেত।