স্কুলছাত্র কাশেম নিহতে উত্তাল বিভিন্ন ক্যাম্পাস: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪ AM , আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৪ AM

গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় স্কুলছাত্র আবুল কাশেম হত্যার প্রতিবাদে গায়েবানা জানাযা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল করেছে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা থেকে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচী পালন করে তারা।
এদিন রাত সাড়ে ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এশার নামাজ পর এ গায়েবানা জানাজা হয়। পরে প্রতীকী কফিন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে জোহা চত্বরে ঘুরে আবার মসজিদে এসে মিছিলটি শেষ হয়।
জানাজা নামাজে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের অনেকে শহিদ হয়েছেন, আবার এ বিপ্লবের পরও অনেকে শহিদ হচ্ছেন। স্বৈরাচারের নেতারা চলে গেছে কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা এখনও রয়ে গেছে। আমরা যদি বুনিয়ামুম মারসুস অর্থাৎ সিসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য হতে না পারি তাহলে ফ্যাসিস্টের দোসররা আরো সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আমি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
এ সময় তারা, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?', 'স্বৈরাচারের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান', 'আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না', 'আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান', 'আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না', 'স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসী শহিদ কাশেমকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমাদের অনৈক্যের কারণে স্বৈরাচারের দোসররা এ সুযোগ নিচ্ছে। আমরা যদি একসাথে প্রতিহত করতে না পারি তাহলে আগামীতে এই কাশেমের জায়গায় আপনি, আমিও থাকতে পারি।
গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ সংলগ্ন মুরাদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেইট) সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় মিছিলটি।
এসময় শিক্ষার্থীরা, বাকশালের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান; আওয়ামী লীগের চামড়া তুলে নেবো আমরা; ছাত্রলীগের চামড়া তুলে নেবো আমরা; যুবলীগের চামড়া তুলে নেবো আমরা; হৈ হৈ রৈ রৈ হাসিনা তুই গেলি কই; ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান; জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে; ছাত্রলীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান; আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; প্রভূতি স্লোগান দেন৷
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ করে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন বলেন, বহু মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয়েছে৷ কিন্তু এই হতাহতের জন্য আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অনুতাপ নেই। আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলে দিতে চাই অবিলম্বে এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন এবং প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন।
সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ) আহ্বায়ক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু এই চব্বিশেই ফ্যাসিস্ট হয়নি, তারা ১৯৭৫ এ ও ফ্যাসিস্ট ছিল। পরপর তিনটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম লিমন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩ শতাংশ শিশু শহীদ হয়েছে। যারা শিশুদেরকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে পারে সেই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। একইসাথে তাদের তল্পিবাহক ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
তিনি আরোও বলেন, ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করার সাহস যদি কেউ দেখায় তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে হলেও তাদের রুখতে আমরা প্রস্তুত আছি।
শাখা ছাত্র শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে৷ রাতে ব্যালট ভরে সকালে ভোটের মুলা ঝুলিয়েছে। এক্সট্রা জুডিশিয়ারি কিলিংয়ের মাধ্যমে দেশের আমজনতা, ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ এবং আলেম সমাজকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও আওয়ামী দোসরা আমাদের ভাই-বোনদের উপর নানাভাবে হামলা করে যাচ্ছে। শয়তানের প্রতিনিধি গণহত্যাকারী এই আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) রাত ১০ ঘটিকায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলের পর র্যাব-২ এর সামনে অবস্থান করে তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না,আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না,আবু সাইদ মুগ্ধ শেষ হয় নি যুদ্ধ ;অ্যাকশন টু, অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন; নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ আয়নাঘর নিষিদ্ধ; গুমের কারখানা আয়নাঘর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর স্লোগান দেয়।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ছাত্র আন্দোলনের শেকৃবি সমন্বয়ক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন,আওয়ামী লীগ কখনই রাজনৈতিক দল ছিল না, তারা সবসময় সন্ত্রাসী ভুমিকায় ছিল।যারাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়েছে তাদেরই আয়নাঘরের মতো জঘন্য জায়গায় রেখেছে। আয়নাঘরের মতো এই জঘন্য জায়গায় বছরের পর বছর নিরপরাধ মানুষদের নির্যাতন করেছে। ৬ফিট বাই ৪ ফিটের ছোট ছোট ঘরে বছরের পর বছর বন্দী করে রেখেছে। ইলেক্ট্রিক শকের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে। অতি দ্রুত এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সারাদেশের সব আয়নাঘর বের করে জনগণের জন্য কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে জনগণ বুঝতে পারে এই আওয়ামী লীগ কর নিকৃষ্ট দল ছিল।
এছাড়াও বিক্ষোভ করেছে মাভাবিপ্রবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রাত ৯ টায় টাঙ্গাইল ডিসি অফিসের সামনে ছাত্রপ্রতিনিধিরা কাশেমের রুহের মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজার আয়োজন করেন। এসময় তার আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের ছাত্রপ্রতিনিধিরা বলেন, কাশেম ভাই ছিলেন একজন নির্ভীক সংগঠক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই তাকে প্রাণ দিতে হলো। আমরা তার আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না। নেতাকর্মীরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরের খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ঠেকাতে যায়। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুত্বর আহত আবুল কাশেম। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়।