চোখ হারানো ইমরানকে ফের আর্থিক সহায়তা দিল ছাত্রদল

ইমরানের খোঁজখবর নিচ্ছে ছাত্রদল
ইমরানের খোঁজখবর নিচ্ছে ছাত্রদল  © টিডিসি ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চোখ হারিয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা মোহাম্মদ ইমরান হোসেনকে ফের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শনিবার (১৬ নভেম্বর) দলটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের নেতৃত্বে ইমরানের সাথে দেখা করে তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর ‘আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি, কারণ আমার পরিবারে কেউ নেই’ শিরোনামে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে সংবাদ প্রকাশ হলে ১২ অক্টোবর ইমরানের সাথে দেখা করে তার দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দেয় ছাত্রদল। সেসময়েও দলটির পক্ষ থেকে ইমরানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ছাত্রদল জানায়, ইমরানের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন ও তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। 

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, ‘আমরা ইমরানের দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম। আজকে ইমরানের খোঁজখবর নিতে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যাই। হাসপাতালের পরিচালকের সাথে ইমরানের সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি, তার চোখের সম্ভবপর চিকিৎসা হয়েছে। এর বাইরে চোখের চিকিৎসার জন্য অন্য কোন দেশে নেওয়া হলেও সেটা চোখ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানো অনেক ব্যয়বহুল। ফলে ছাত্রদল ইমরানের ব্যক্তিগত পুনর্বাসনের জন্য পরবর্তীতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। আমরা সরকারকে আহ্বান করবো, ইমরানের উন্নত চিকিৎসার জন্য যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

চিকিৎসার বিষয়ে কথা বললে ইমরান বলেন, ‘আমার শরীরে এখনও ছররা বুলেটগুলো থেকে গেছে, সেগুলোর কোন চিকিৎসা হয়নি। ডাক্তারদের মারফত জানতে পেরেছি, নষ্ট হওয়া চোখ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বের হলে আমার যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই।’ ইমরন জানান, সরকারের পক্ষ থেকে তিনি এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন জন থেকে আরও কিছু অর্থ পেলেও পুনর্বাসনের জন্য এসব অর্থ পর্যাপ্ত নয়।

ইমরান আরও বলেন, ‘ডাক্তাররা আমার চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছে। তবে চোখ ভালো হবে এমনটা তারা জানাতে পারছে না। ছাত্রদলের আমার পাশে থেকে খোঁজখবর নিয়েছে, আর্থিক সহযোগিতা ও করেছে। যতদূর বুঝতে পারছি আমার নষ্ট হওয়া চোখটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে আমার শরীরে থাকা ছররা বুলেটগুলো বের করা প্রয়োজন। আর সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। কারণ আমার পরিবারে কেউ নেই। চলার মতো ব্যবস্থা না হলে বেঁচে থাকা কষ্ট হবে।

এসব বিষয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইমরানের আহত চোখটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। এর বাইরে অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়া হলেও এটার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গুলি লাগা চোখ সচরাচর ভালো হয় না। এটা পৃথিবীর সবখানে এমনি। এই মুহূর্তে তার ব্যক্তিগত পুনর্বাসন হওয়াটা বেশি জরুরি।’

আরও পড়ুন: সংবাদ প্রকাশের পর ইমরানের দায়িত্ব নিলো ছাত্রদল

অধ্যাপক খায়ের আরও বলেন, ‘আমরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে এভাবে কতদিন সে হাসপাতালে থাকবে। এখান থেকে বের হলে তার যাওয়ার মতো কোনো ঠিকানা নেই। আমরা নিজেদের জায়গা থেকেও তাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে এখনও কোনো রেসপন্স আসেনি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদ আউয়াল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাহবুব শেখ, সাবেক সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এস এম মেহেদী হাসান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ডা. সৈকত, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. তানজীম রুবাইয়াত আফিফ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লিফাত।


সর্বশেষ সংবাদ