গুলিতে নিহত তুরাব, মৃত স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি প্রবাসী স্ত্রী
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪০ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪০ PM
কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৯ জুলাই সিলেটে সংঘর্ষে প্রাণ হারান এটিএম তুরাব। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাত্র দু'মাস আগে বিয়ে হয়েছিল সিলেটের নিহত সাংবাদিক। বিয়ের কিছুদিন পর দেশ ছেড়ে চলে যান তার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী স্ত্রী তানিয়া ইসলাম। কথা ছিল দ্রুত তুরাবকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন তিনি। কিন্তু তা আর হলো কই!
তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তুরাব। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় তুরাবের মৃত মুখও তার প্রবাসী স্ত্রী দেখতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ জানান, গত ১৩ মে বিয়ে করেন তুরাব। বিয়ের এক মাসের মাথায় তার স্ত্রী তানিয়া ইসলাম লন্ডন চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর সেখানে তানিয়া মুষড়ে পড়েছেন।
আবুল আহসান জানান, তুরাবের মৃত্যুর খবর শুনে পরদিনই তানিয়া দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় আসতে পারেননি। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় শেষবারের মতো স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি তিনি।
তুরাবের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। গত ২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতেই তার দাফন হয়। তবে তাদের পরিবার নগরের যতরপুর এলাকায় থাকেন। এই বাসায়ই থাকেন তুরাবের মা মমতাজ বেগম। ছেলেকে এভাবে হারিয়ে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি তিনি। বারবার বিলাপ করছেন এবং মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই দুপুরে নগরের বন্দরবাজার এলাকা থেকে মিছিল বের করে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসহযোগী সংগঠন। আচমকাই সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায় মিছিলকারীদের। পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গকেরতে গুলি ছোড়ে। ওইদিন আরও কয়েকজন সহকর্মীর সাথে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তুরাব। আচমকা সংঘর্ষ শুরু হলে তৎক্ষণাৎ নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারেননি তুরাব।
সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত সহকর্মীরা দেখেন তুরাব মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। তৎক্ষণাৎ তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা। পরে সেখান থেকে তাকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থান তুরাব মারা যান।
পরদিন ২০ জুলাই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তুরাবের মরদেহের ময়না তদন্ত হয়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম বলেন, 'নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।