সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডার মা

জান্নাত বরণ করে নিচ্ছে পরিবারের সদস্যরা
জান্নাত বরণ করে নিচ্ছে পরিবারের সদস্যরা   © সংগৃহীত

গতকাল প্রকাশিত হলো ৪০তম বিসিএসের ফলাফল। প্রশংসায় ভাসছেন বিসিএসে উত্তীর্ণরা। যেদিন দেশে ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার সুপারিশ প্রাপ্ত হলেন সেদিনই বাংলাদেশের সোণার হরিণ সরকারি চাকরি ছেড়ে দিলেন ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে যোগ দেয়া জান্নাত ই হুর (সেতু)। ১০ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতি টানেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেতু । নিজের সন্তানদের সময় দিতেই চাকরি ছেড়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) কর্মজীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন এ কর্মকর্তা। চাকরির জীবনের শেষ দিনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেন তার সহকর্মীরা। চাকরি জীবনে ইস্তফা দিয়ে পুরোদস্তুর গৃহিণী জীবনের শুরুতে চমকে দিয়েছে তার পরিবার। এত বড় ত্যাগ স্বীকারের দিনটিতে তার বাসা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে, ফুলের তোড়া দিয়ে এবং কেক কেটে জান্নাতকে বরণ করে নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস সম্পন্ন করেন জান্নাত। একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। মৎস্য অধিদপ্তরে তার কর্মজীবন শুরু হয় জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে। ২০১৫ সালে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।

আরও পড়ুন: পররাষ্ট্র ক্যাডারে মোহাইমিনের ১ম হওয়ার প্রেরণা স্ত্রী নয়!

২০১১ সালে সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে আবদ্ধ হন বিয়ের বন্ধনে। ব্যক্তি জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জননী জান্নাত। জান্নাত শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। স্বামী সানোয়ার রাসেল সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।

পেশাগত জীবনে সাফল্যের চূড়ায় থেকেও স্বেচ্ছায় অবসরের ব্যাপারে জান্নাত ই হুর সেতু বলেন, আমি চাকরিটা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার সন্তানদের জন্য। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরি করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয় আমাদের। ফলে সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীবনে। এজন্য গত জানুয়ারিতে আমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। আর সে মোতাবেক ৩১ মার্চ ছিল কর্মস্থলে আমার শেষ দিন। এদিন সহকর্মীদের কাছ থেকেও আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছি।

জান্নাতের স্বামী সানোয়ার রাসেল তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, স্বামী হিসেবে আমি আমার স্ত্রীর চিন্তা ও দর্শনকে সম্মান জানাই। আমি মনে করি সংসারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব স্বামী হিসেবে আমার। কাজেই আমার স্ত্রী ঘরে ও বাইরে দ্বিগুণ পরিশ্রম না করে যদি শুধু ঘরের দায়িত্ব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন, তবে আমারও উচিত হবে তার এই সিদ্ধান্তে পাশে থেকে সর্বদা তাকে সহযোগিতা করে যাওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ