বুয়েট-কুয়েট থেকে বিসিএসে প্রথম: শ্রম, সময় ও রিসোর্সের অপচয়

পিএসসি ও লেখক
পিএসসি ও লেখক   © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস’র ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ১৯৬৩ জন চূড়ান্ত নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুপারিশপ্রাপ্তদের অনেকেই অভিনন্দন বার্তা দিচ্ছেন। প্রশংসায় ভাসছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। তাদের সংগ্রাম ও পরিশ্রমের একাধিক দিক গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তবে এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। 

চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। বিসিএস নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত পেশাগুলোতেও তারা ভালো করবেন। কিন্তু যে শ্রম ও সময় দিয়ে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন, সেই বিদ্যা আর তাদের পেশাজীবনে সরাসরি প্রয়োগ হবে না বরং শ্রম, সময় ও রিসোর্সের এ এক অপচয় বলে অনেকেই মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে আরিফ জেবতিক নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাসে এসব মন্তব্য জানিয়েছেন। তার এই পোস্টে অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ আর ভিন্ন সুর দিয়েছেন।

আশফাক ওশান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, এটাও পুরাপুরি করা যাবেনা৷ কারণ সার্কুলার দেয়া থেকে শুরু করে গেজেট হবার আগ পর্যন্ত কম করে হলেও ২ বছর সময় লাগে! ইন্টার পাশ করে কেউ তখন ভার্সিটিতে ভর্তি হবেনা, জবের প্রিপারেশন নিবে। যার ১ম বার হবেনা সে পরেরবার চেষ্টা করবে। তার আরও ২ বছর যাবে, এভাবে চলতেই থাকবে। তখন সবাই জবকেই গুরুত্ব দিবে। গ্রাজুয়েশন কে না।

ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, যে দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ৮০০০-১০০০০ টাকার চাকরি করতে হয়, সে দেশে এটি স্বাভাবিক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ‘ফেসবুক সূত্রে জানলাম ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসনে প্রথম স্থান (কুয়েট), পুলিশে প্রথম স্থান (কুয়েট), পররাষ্ট্রে প্রথম স্থান (বুয়েট), কাস্টমসে প্রথম স্থান (বুয়েট), ট্যাক্সে প্রথম স্থান (বুয়েট)।’

তিনি লেখেন, বুয়েট, চুয়েট, কুয়েটে যারা পড়েন, তাঁরা ছাত্র হিসেবে মেধাবী। নিশ্চয়ই তাঁরা এই পেশাগুলোতেও ভালো করবেন। কিন্তু যে শ্রম ও সময় দিয়ে তাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন, সেই বিদ্যা আর তাঁদের পেশাজীবনে সরাসরি প্রয়োগ হবে না। শ্রম, সময় ও রিসোর্সের এ এক অপচয়।

চাকরি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে তিনি লেখেন, আমার কাছে মনে হয়, এইচএসসি পরীক্ষার পরই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ হওয়ার সুযোগ হলে ভালো হয়। সামরিক বাহিনীর অফিসার পদের নিয়োগ কিন্তু এইচএসসির পরপরই হয়, সেই অফিসাররা পরবর্তীতে নিজ সেক্টরে গ্রাজুয়েশন করেন

আরও পড়ুন : স্বামী প্রশাসনে ৭ম, স্ত্রী পুলিশ ক্যাডার

তিনি আরও লিখেছেন, বেসামরিক প্রশাসনেও এটি ভাবা যেতে পারে। যারা যে বিভাগের জন্য মনোনীত হবেন পরবর্তীতে তাঁরা সেই বিষয়ের উপরই অনার্স ও মাস্টার্স করবেন। সেটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে পারে অথবা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও হতে পারে। পাস করার পর নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে ৬ মাসের ইন্টার্নিশিপও চালু করা যেতে পারে। নিজেদের পেশাগত বিষয়ের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে সাপ্লিমেন্টারী কোর্স থাকবে, যাতে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরি হতে পারেন।

এ ব্যক্তিত্ব আরও লিখেছেন, এই সিস্টেমে সুবিধা হবে, যিনি পুলিশে যাচ্ছেন তিনি এইচএসসির পরে ৪ বছর অপরাধ বিদ্যা বিষয়ে গভীর জ্ঞান লাভ করে তারপর স্বল্প মেয়াদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে যেতে পারেন। হয়তো থানাতে গিয়ে তিনি এসাইনমেন্ট করবেন, পুলিশিং নিয়ে ছাত্রাবস্থাতেই গবেষণা করবেন। একই ভাবে যিনি কর কর্মকর্তা হচ্ছেন তিনি যখন মাস্টার্স শেষ করবেন ততদিনে কর আদায়ের আইনকানুনগুলো তাঁর মুখস্থ হয়ে যাবে।

রেল বিভাগের তরুণ অফিসার এর আগে ৪ বছর রেল নিয়ে পড়াশোনা করবেন, যাত্রী সেবার উপর এসাইনমেন্ট জমা দিবেন, গবেষণা করবেন- তাঁর অধীত বিদ্যা হবে টনটনে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনগুলোর পুরোপুরি ব্যবহার হবে। গরীব দেশের রিসোর্স, যত ভালোভাবে ব্যবহার করা যায় ততোই তো ভালো।


সর্বশেষ সংবাদ