সার্থক আর্জিনা বেগমের জমি বিক্রি, মেডিকেলে চান্স পেলেন যমজ তিন ভাই

মায়ের সঙ্গে তিন যমজ ভাই
মায়ের সঙ্গে তিন যমজ ভাই  © সংগৃহীত

বাবা হারা যমজ তিন ভাইয়ের তিন জনই এখন মেডিকেলের ছাত্র। একসঙ্গে জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। সবক্ষেত্রে তিনজনের ফলাফলও একই। বলছিলাম তিন ভাই জমজ মাফিউল হাসান, শাফিউল ইসলাম ও রাফিউল হাসানের কথা।

মাফিউল হাসান ২০২৩ সালে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে, ২০২৪ সালে শাফিউল ইসলাম দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ও রাফিউল হাসান নোয়াখালি আব্দুল মালেক মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের মৃত স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে তারা। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা হারান অদম্য এ তিন মেধাবী শিক্ষার্থী। এরপর থেকে মা আর্জিনা বেগম কৃষিজমিতে আবাদ করে ছেলেদের পড়াশোনা করিয়েছেন। এমনকি তাদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে মা আরজিনা বিক্রি করেছেন প্রায় চার বিঘা জমিও।

ধুনটে অদম্য যমজ তিন ভাইয়ের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নপূরণ | প্রথম আলো

যমজ এ তিন সহোদর ২০২০ সালে ধুনট সরকারি নইম উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। বাবা হারা যমজ তিন সহোদরের অভাবনীয় সাফল্যে শুধু বথুয়াড়ী গ্রাম নয়, গোটা উপজেলায় যেন আনন্দের জোয়ার বইছে।

মাফিউল হাসান বলেন, তিন যমজ ভাই বগুড়ায় মেসে একসঙ্গে থেকে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা খরচ চালিয়েছেন। কখনোই আমাদের কষ্ট দেননি। গ্রামের মধ্যে আমরাই প্রথম মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এজন্য গ্রামের মানুষের ভালোবাসাও পাচ্ছি।

শাফিউল হাসান বলেন, বাবা বেঁচে থাকলে কত খুশি হতেন। শিশুকালেই বাবাকে হারিয়েছি। এখন মা-ই বাবার অভাব পূরণ করছেন। জীবনের সংগ্রাম এখনো অনেক বাকি।

বাবাহারা যমজ তিন ভাইয়ের মেডিকেলে চান্স, খরচ যোগাতে না পেরে হতাশ মা

রাফিউল হাসান বলেন, আমরা তিন ভাই এখন চিকিৎসক হওয়ার পথে। মায়ের সংগ্রামেই এতো দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। স্বপ্ন পূরণে মায়ের এমন ত্যাগ আমাদের পথ চলায় অনুপ্রাণিত করবে।

আরজিনা বেগম জানান, তার স্বামী গোলাম মোস্তফা স্থানীয় মাঠপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি অকূল পাথারে পড়েন। পরে অনেক ভেবেচিন্তে স্বামীর জমিজমা বন্দক রেখে ছেলেদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হন। মেয়ে মৌসুমী বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত।

তিনি বলেন, আমার জমি না হয় শেষ হয়েছে। তবুও এতিম ছেলে ও মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার রাস্তা দেখিয়েছি। তবে অভাব-অনটনের সংসারে মেয়ে মৌসুমীকে কীভাবে বিয়ে দেব এবং যমজ তিন ছেলের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে বহন করবো— সেই চিন্তা তাড়া করছে। ছেলেদের বাকি পথ চলায় সরকারের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ