বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ

স্কুলের নির্বাচনে ভোট দিতে আসবেন ‘মৃত ব্যক্তিরা’!

বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়ায় অবস্থিত বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ গভর্নিং বডির নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষালয়টিতে পূর্বের কমিটি বহাল রেখে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি। এতে বর্তমান ভোটারদের পাশাপাশি তালিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থীদের ‘মৃত অভিভাবকরাও’। 

বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভোটার তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তালিকায় রয়েছেন দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা হারুন অর রশীদের নাম। বিদ্যালয়ের ৪৫৪ নম্বর রোলধারী এ ছাত্রীর বাবা মারা গেছেন। এছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর বাবা মোস্তাফিজুর রহমানেরও; তিনি মারা গেছেন তালিকায় নাম ওঠানোর আগেই। এর বাইরে তালিকায় ২৬০২ থেকে ২৬০৫ পর্যন্ত নম্বরে রয়েছে একই অভিভাবকের নাম। একইভাবে তালিকার ২৬০৮ ও ২৬০৯ নম্বর ভোটারও একই ব্যক্তি।

বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি এবং শিক্ষক প্রতিনিধি পদে যারা নির্বাচন করছেন তাদের অভিযোগ, পূর্বের কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ ভূইঁয়া আবদুর রহমান তাদের কোটি কোটি টাকার অনিয়ম এবং দুর্নীতি আড়াল করতে নতুন কমিটিতে তাদের মনোনীতদের যেকোনো উপায়ে বিজয়ী করার জন্য নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে তাদের সব ধরনের অনিয়মও।

আরও পড়ুন: মাভাবিপ্রবির নিয়োগে প্রথম-দ্বিতীয়কে ছাপিয়ে শিক্ষক হয়েছেন ১১তম প্রার্থী

তারা বলছেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হয়েছে একাধিক লিখিত অভিযোগ। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর এক আবেদনে জানানো হয়েছে, বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাচনে শিক্ষক প্রতিনিধি পদে কলেজ ও স্কুল শাখায় শিক্ষকদের ভোটার তালিকায় কলেজ এবং স্কুল শাখার শিক্ষকদের আলাদা করা হয়নি।

এছাড়াও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, দু’জন সহকারী প্রধান শিক্ষক, একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং একজন সহকারী লাইব্রেরীয়ানকে। অথচ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ভোটার হতে বা ভোট দিতে পারবেন না। বিষয়টি অবগত থাকলেও কোনো ব্যবস্থাই নেননি অধ্যক্ষ ভূইঁয়া আবদুর রহমান।

এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি নির্বাচনের ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি। পরদিন ২ জানুয়ারি চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ। তাদের স্বাক্ষর করা ওই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছে এমন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরও।

আরও পড়ুন: ‘সংজ্ঞা অনির্ধারিত’ রেখে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন সম্ভব নয়

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হন ৬৮২ নম্বর ব্যালটধারী ভোটারের সন্তান। এর আগে জানুয়ারি ২ তারিখ একই প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন আরেক শিক্ষার্থী। শ্রেণিকক্ষে তার রোল ২২৬। নিয়ম অনুযায়ী, তারা ভোটার হওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যালয়টির গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি আব্দুস সালাম বাবুর পক্ষের না হওয়ায় ভোটার করা হয়নি তাদের অভিভাবকদের।

বিপরীতে বিগত ৩ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে। এছাড়াও ১৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ৩১০ থেকে ৩২৩ রোলধারী সব শিক্ষার্থীর অভিভাবককেও ভোটার করা হয়েছে একই কায়দায়। এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ভোটার নম্বর ক্রমানুসারে ৬৬৮ থেকে ৬৮২ পর্যন্ত।

বর্তমান সভাপতি আব্দুস সালাম বাবুর পক্ষের বিধায় তাদের ভোটার করা হয়েছে। এছাড়াও বিগত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ভর্তি হওয়া বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভোটার তালিকায়।

আরও পড়ুন: মতিঝিল মডেলে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও ফের বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিপরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু’র দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মো. নাজিম উদ্দিন সরকার পিন্টুকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিভাবকের মেয়েকে জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির প্রেক্ষিতে তার অভিভাবক প্রতিনিধি পদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) ও প্রিজাইডিং অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম। 

যদিও জানুয়ারির ২২ তারিখে সন্তানকে ভর্তি করে ভোটার হয়েছেন ৬৮২ নম্বর ভোটার। এরপরও শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ‘মৃত ব্যক্তি’ এবং একই শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে একাধিক ব্যক্তির নাম।

অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু ও বর্তমান অধ্যক্ষ ভূইঁয়া আবদুর রহমান তাদের দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা অনিয়ম চালিয়ে নিতে ভোটার তালিকায় একই নামে একাধিক ভোটার এবং ‘মৃত ভোটার’ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়াও তাদের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হতে খরচ কোটি টাকা!

তবে সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার এবং সরকারের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য প্রদানে অপারগতা জানিয়েছেন।

আর বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ভূইঁয়া আবদুর রহমান শুরুতে একটি মিটিংয়ে রয়েছেন এবং পরবর্তীতে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে তার সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি আবদুস সালাম বাবু’র সাথে। তিনি প্রথমে বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার পর নিজের পরিচয়ই অস্বীকার করেন। এসময় নিজেকে আবদুস সালাম বাবু নন বলেও মোবাইল ফোনে দাবি করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ