মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও ফের বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চলমান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির দু’জন সদস্য। বিষয়টি নিয়ে তারা সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) একটি চিঠি পাঠিয়ে চলমান নিয়োগ স্থগিতের আবেদন জানিয়েছেন। অতিরিক্ত শিক্ষক থাকার পরও নিয়োগে অনিয়ম, অবৈধ আর্থিক লেনদেন এবং পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতেই এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বলে অভিযোগ করেছেন গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য।

এর আগে গত জুলাইয়ের শেষে ও চলতি আগস্টের শুরুতে ইংরেজি মাধ্যমের (ইংলিশ ভার্সন) জন্য শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক নিয়োগের ওই বিজ্ঞপ্তিতে সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

তবে নিয়োগ স্থগিত চাওয়া মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক সদস্য (মাধ্যমিক স্তর) মো. আব্দুল্লাহ ও অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত) অজিফা খানম তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারি প্রধান শিক্ষক ও ইংলিশ ভার্সনে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত তাদের অনুপস্থিতিতে অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষকরাই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। এছাড়াও বর্তমানে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত ফি হতে অর্থ দিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন করে আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে এ সংকট আরও বাড়বে বলেও মত শিক্ষালয়টির শিক্ষকদের।

বর্তমানে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রতিমাসে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ঘাটতি প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থায় কোন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন না থাকলেও বর্তমান গভর্নিং বডি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়াও আমাদের অগোচরে এটি করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম হতে পারে; যা অতীতেও হয়েছে—অজিফা খানম, গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত)।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাউশিকে দেওয়া ওই চিঠিতে গভর্নিং বডির এই সদস্যরা জানিয়েছেন, আমাদেরকে গভর্নিং বডির মিটিংয়ে অন্তর্ভূক্ত না করে গভর্নিং বডির সভায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে পরবর্তীতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একটি শিক্ষক প্যানেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

এ নিয়ে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক সদস্য (মাধ্যমিক স্তর) মো. আব্দুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, মিটিংয়ে আমাদের রাখা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত শিক্ষক থাকার পরও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়। আমি আশঙ্কা করছি, একটি পক্ষপাতদুষ্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে এরকম হয়েছে। তাই, শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে একটি স্বচ্ছ মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থায় কোন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন না থাকলেও বর্তমান গভর্নিং বডি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জনবল কাঠামো অনুযায়ী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে এমনিতেই অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তার কোনো তোয়াক্কা না করেই বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বর্তমান গভর্নিং বডি একটি কমিটি করেছে বলেও জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতির মোট চারটি বিভক্ত গ্রুপ চলমান থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের গ্রুপে থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। 

নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের বা অন্যান্য যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে—তা অনেক পুরোনো। এখন নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখন আমাদের ইংলিশ ভার্সন চালানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। আর অতিরিক্ত শিক্ষক নেই; ঘাটতি রয়েছে বলেই চলতি নিয়োগ—আবদুল মতিন ভূঁইয়া, সভাপতি, গভর্নিং বডি, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বেতন ও সেশন ফি নির্ভর প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রতিমাসে শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন ঘাটতি প্রায় ৪০ লাখ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থায় কোন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন না থাকলেও বর্তমান গভর্নিং বডি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। জনবল কাঠামো অনুযায়ী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে এমনিতেই অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া রয়েছে—জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিগত ১০ বছর যাবত ইংলিশ ভার্সনের পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছে এবং শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দ্বারাই এর শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মূল শাখায় (মতিঝিল) শিক্ষক রয়েছেন ১২৫ জন। শিক্ষার্থী রয়েছে বাংলা মাধ্যমে ৩ হাজার ৮৬৪ জন। আর ইংরেজি মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৮০ জন। 

প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত) অজিফা খানম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলছেন, বর্তমানে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রতিমাসে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ঘাটতি প্রায় ৪০ লাখ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থায় কোন শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন না থাকলেও বর্তমান গভর্নিং বডি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়াও আমাদের অগোচরে এটি করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম হতে পারে—যা অতীতেও হয়েছে। তাই, এ নিয়োগ স্থগিত করা উচিত বলেও জানান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি আবদুল মতিন ভূঁইয়ার অনুগত বর্তমান অধ্যক্ষ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান খান। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও সভাপতির অনুগত থাকা অধ্যক্ষ এবং তার অনুগত শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাসে না আসা এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করালেও কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না।

শিক্ষকদের নিয়মিত তালিকায় পাঁচটি ক্লাস করানোর কথা থাকলেও তারা শুধুমাত্র হাজিরায় নাম তুলতে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর এবং শেষ ক্লাস নিয়ে থাকেন বলেও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমান খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা অভিযোগ জানিয়েছেন তারা বর্তমানে গভর্নিং কমিটিতে নেই। তাই তাদের মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। তাদের চিঠির বিষয়ে আমি জানি না। যদি আমাদের বোর্ড, মন্ত্রণালয় বা মাউশি কোনো কিছু জানায়, তাহলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। 

তিনি বলেন, নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের বা অন্যান্য যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে—তা অনেক পুরোনো। এখন নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন আমাদের ইংলিশ ভার্সন চালানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। আর অতিরিক্ত শিক্ষক নেই—ঘাটতি রয়েছে বলেই চলতি নিয়োগ।


সর্বশেষ সংবাদ