কুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাজার করানোর অভিযোগ
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:৩১ PM , আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২২, ১১:৪৮ PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে উপাচার্যের কাছে চিঠি প্রদান করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) একই চিঠি উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও ডিন বরাবরও জমা দিয়েছেন তাঁরা। তবে অভিযোগের কারণে পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে বলে অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করেননি কেউ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ড. বনানী বিশ্বাস প্রায়ই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করে থাকেন। নিজের বাসার বাজার খরচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্তিগত কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করান এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে থাকেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে অন্যান্য শিক্ষককে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা, পাঠদানের সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে বের করে দেয়া এবং কোনো ব্যাপারে তার সাথে দেখা করতে গেলে তাচ্ছিল্য করে রুম থেকে বের করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: চবির পরীক্ষায় অংশ নেননি ৪৩ হাজার, অনুপস্থিতির শীর্ষে ‘এ’ ইউনিট
স্নাতকোত্তর একটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা সিলেবাস অনুযায়ী ঐচ্ছিক একটি কোর্স নিতে চাইলে তিনি কোর্স দিবেন না বলে ছাত্রদের সাথে অশোভন আচরণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের নিজেদের দিয়ে কোর্সটি পরিচালনা করতে বলেন বলেও অভিযোগত্রে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে অভিযোগকারীদের পরিচয় জানার পর কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে সাংবাদিকদের। তাঁদের একজন বলেন, ‘তাঁর (শিক্ষক বনানী) অসদাচরণে আমরা অতিষ্ঠ। অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করলে আমাদের ফলাফলে প্রভাব পড়বে। এই ধরণের আচরণ থেকে মুক্তি পেতেই উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছি আমরা। সাবেক শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’
অভিযোগের সত্যতা জানতে ইংরেজি বিভাগের একাধিক শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের মধ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, বিভাগের সভাপতির এধরণের আচরণে সহকর্মী হিসেবে আমরা লজ্জিত এবং বিব্রত। উনি শুধু শিক্ষার্থীদের সাথেই এধরণের আচরণ করেন না, আমাদের সবার সাথেই করেন। প্রায়ই উনি বিভাগের শিক্ষকদের নামে মিথ্যাচার করেন। মতের অমিল হলে হেনস্থা করেন। সম্প্রতি জুনিয়র শিক্ষকদের নিজের গ্রুপে নেয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন।
স্নাতকোত্তরে থিসিস পাওয়া শিক্ষার্থীরা তার অধীনে কাজ না করার কারণে অন্যান্য কোর্সে তাঁদেরকে নাম্বার কমিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন আরেক শিক্ষক।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘এই কাজ আমাদের কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে না। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিভাগের ২ শতাংশ শিক্ষার্থীরও যদি আমার প্রতি অসন্তোষ থাকে, আমি সব ছেড়ে দেব। প্রতিটি মিডটার্মের পর আমি খাতা শিক্ষার্থীদের দেখাই। অন্যান্য শিক্ষকদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা আমাকে অভিযোগ দেওয়ায় তাঁরা (শিক্ষকরা) আমার নামে মিথ্যাচার করছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলে তিনি জানান, তিনি একটি বেনামি চিঠি পেয়েছেন। কেউ যদি তাতে স্বাক্ষর করতো কিংবা তাঁর সাথে দেখা করে ঘটনার বর্ণনা দিত, তাহলেই তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিতেন।’
শিক্ষার্থীরা তো পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়ার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে চান না- উপাচার্যকে এমন ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর পর রাত সাড়ে ৯ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো প্রতিত্তুর দেননি তিনি।
প্রসঙ্গত এর আগে, ইউজিসির সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি একই সাথে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।