ঈদের সময়েও দায়িত্বের বেড়াজালে বন্দি ঢাকা কলেজের কর্মচারীরা

  © টিডিসি সম্পাদিত

শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস। আর ঈদের সময় পুরোপুরি শূন্যতা নেমে আসে। কলেজের সবার ছুটি হলেও কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টাই যেন জরুরি কাজ। যুগের পর যুগ এভাবেই কর্মস্থলে তাদের ছুটির আনন্দ ও ঈদ উৎসব খুঁজে নিতে হয়। বিষয়টা যেন নিয়ম বা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবসর বিসর্জন দিয়ে দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তারা।

রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা কলেজে ছুটি কার্যকর হয়েছে গত ১ মার্চ থেকে। ছুটি শেষ হবে ৬ এপ্রিল। দীর্ঘ ৩৭ দিনের ছুটির মাঝে কলেজের শতাধিক প্রহরী ও অফিস স্টাফদের ছুটি মাত্র সাত দিন। গত ২৯ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি শুরু হলেও কলেজের যেকোনো প্রয়োজনে তাদের কর্মস্থলে কর্তব্য পালন করতে হয়।

ঈদ আনন্দের মুহূর্তেও ধরাবাঁধা দায়িত্বের বেড়াজালে বন্দি এসব কর্মচারী ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেও মেলে না জীবনযাপনের ন্যূনতম পারিশ্রমিক। ঈদের সময় তাই উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিতে তাদের দাবি জানাতে হয়। খেয়ে না খেয়ে পরিবারকে উৎসব উপভোগের সুযোগ করে দিতে তাদের এই নির্মম জীবন সংগ্রাম।

গত রমজান মাসে কথা হয় ঢাকা কলেজের এসব কর্মচারীরা সঙ্গে। তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে নিজেদের জীবনসংগ্রামের সুখ-দুঃখের গল্প প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন : ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে সৎমা ও ভাই-বোনের দায়ের কোপে প্রকৌশলী নিহত

ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ২৪ বছর ধরে চাকরি করেন অফিস সহকারী (পিয়ন) দুলাল হোসেন। এই ঈদে ছুটি মেলেনি তার। এর মধ্যেও তাকে কাজ করতে হচ্ছে।

দুলাল বলেন, স্যারের তো একা রুমে রেখে আমরা ঈদ করতে পারব না। স্যারের সেবা দেওয়া আমাদের মূল দায়িত্ব। অফিসিয়ালি ঈদে আমাদের সরকারি ছুটি আছে। অধ্যক্ষ স্যারেরও ছুটি আছে। দেখা যায় আমাদের ছুটি থাকলেও অনেক সময় তা কাটাতে পারি না। হঠাৎ কোনো জরুরি কাজ পড়লে সেটা করতে হয়। এর মধ্যে অধ্যক্ষ স্যার চলে এলে আমাদেরও আসতেই হবে। এক বছর পর একটি ঈদ আসে। এই দিনে ধনী-গরিব সবাই সমান। এই দিনটায় তো সবাই আনন্দ করে। 

গ্রামে ঈদ উদযাপনের সুযোগ না থাকা ও বেতনবৈষম্যের আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ঈদ ঢাকায় কাটবে ভালোই। কিন্তু আমরা যখন ঈদ উদযাপন গ্রামে করতাম, গ্রামের স্বাদটা তো আর শহরে পাওয়া যাবে না। আমার মা মারা গেছে, বাবা অসুস্থ। আমরা যে বেতন পাই, তা খুবই কম। কিন্তু আমাদের ডিউটি টাইম অনেক বেশি, কাজও বেশি। আমরা সবকিছু সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করি কিন্তু এক জায়গায় আমরা বিচ্ছিন্ন, সেটা হলো বেতনটা কম। আমাদের চাকরিটা সরকারি না। আধা সরকারি বলা যায়। আমরা বর্তমানে বেতন পাই ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। সরকারি কর্মচারীরা আমাদের থেকে দ্বিগুণ বেতন পায়।

তিনি বলেন, আমাদের এই স্বল্প বেতন বর্তমানের এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কষ্ট হয়। রমজান মাসে সবাই ভালোমন্দ খেতে চায়। কিন্তু আমরা ভালোমন্দ খেতে পারি না। এই বেতনে যতটুকু পারি ভালো খাওয়ার চেষ্টা করি। বাকিটা যদি আল্লাহ রিজিকে রাখেন, তাহলে খাব আর নাহলে না খেয়ে থাকি।

কলেজের অফিস সহায়ক পদে ২২ বছর চাকরি করছেন মোহাম্মদ শাহিন। তিনি বলেন, ছুটি ছয় থেকে সাত দিনের। তবে এই ঈদে ইনশাল্লাহ বাড়ি যাব। ঈদ অনুভূতি হল খুব ভালো লাগে। ঈদে বাড়িতে যাব, আনন্দ আছে। বাড়িতে বাবা নেই মা আছে, ছেলেমেয়ে আছে। বন্ধুবান্ধব যারা আছে সবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করব। সবার সঙ্গে ঈদ করা অনেক মজা আছে। ঈদে মায়ের জন্য কাপড় কিনেছি, ছেলেমেয়ের জন্য কিনেছি। বউয়ের জন্য টুকটাক যা পারি কিনছি।

আরও পড়ুন : সমন্বয়ক পরিচয়ে ওসিকে বদলির হুমকি, সাংবাদিককে হেনস্তা

অফিস সহায়ক হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যূনতম বেতন ২০ হাজার টাকা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বেতন অল্প ১১ হাজার টাকা। এই বেতন চলতে কষ্ট হয়। এরপরও আল্লাহ চালাচ্ছেন। ঈদে বেতন-বোনাস পেয়েছি। সংসারে ছেলেমেয়ে আছে, তাদের লেখাপড়ার খরচ আছে, নিজের চলা লাগে। এই বেতনে আমরা সন্তুষ্ট না। আমাদের কষ্ট হয়। এটাকে বেতন বলে না। 

কলেজের দুই নম্বর গেটের দায়িত্বে আছেন প্রহরী জয়দ্বীপ হালদার। ২০১৮ সাল থেকে তিনি এই কাজ করছেন। কর্মস্থল ও জীবনের কঠিন বাস্তবতার কথা দুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে ঈদের ছুটি এখনো দেয়নি। তবে ইচ্ছে আছে এবার ঈদে বাড়িতে যাব। আমার বর্তমান বেতন ৭ হাজার ২৬০ টাকা। এই বেতনে কীভাবে সংসার চালাই, এটা সবাই বোঝে। একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেও ১০ হাজার টাকা লাগে। আমি বাজারে মাছ কিনতে গেলেও ছোট দেখে মাছ কিনি, সর্বনিম্ন দরের চাল কিনি। আমরা কোনোভাবে ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি।

প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করে তিনি বলেন, এই বেতনে নিজের ভরণপোষণ হয় না ঠিকমতো। কিন্তু এরপরও আছি কারণ এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেউ যদি বলে কোথায় চাকরি করি? তাহলে বলা যায় ঢাকা কলেজে চাকরি করি।

বেতনকাঠামোর পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে জয়দ্বীপ হালদার বলেন, বেতনকাঠামোর পরিবর্তনের জন্য কোথায় যাব, কী করব বুঝতে পারছি না। অধ্যক্ষ স্যার যদি আমাদের জন্য কিছু করেন, মুখ তুলে তাকান, তাহলে আমরা তাকে মন থেকে দোয়া ও ধন্যবাদ দেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence