কবজি দিয়ে লেখা মিনারার ভর্তি নিশ্চিতের আশ্বাস বেরোবি উপাচার্যের

মিনারা খাতুন
মিনারা খাতুন  © সংগৃহীত

হাতের কবজির সাহায্যে লিখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েও শুধু অর্থাভাবে স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ বেরোবিতে ভর্তি হতে পারছেন না মিনারা। টাকার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মিনারা খাতুনের শৈশবকালের ইচ্ছা। তবে সেই মিনারা খাতুনের ভর্তি নিশ্চিত করতে আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী।

মিনারা খাতুনের ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, আমি মিনারার ভর্তির বিষয়ে কথা বলবো। ইনশাআল্লাহ তার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

জানা যায়, জন্ম থেকেই দুই হাতে কোনো আঙুল নেই মিনারার। তবুও অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে হাতের কবজির সাহায্যে লিখতে শেখেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং পরের কয়েক বছর পড়ার খরচ জোগানোই এখন তার মূল চিন্তা।

এদিকে সোমবার (২১ অক্টোবর) বেরোবিতে ভর্তির শেষ দিন। ভর্তির শেষ সময় ঘনিয়ে এলেও ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মিনারার পরিবার।

মিনারা খাতুন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার দিনমজুর মো. রফিকুল ইসলাম ও মৃত মর্জিনা বেগমের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট।

জীবন যুদ্ধে হারতে নারাজ মিনারা। দুই হাতের আঙুল না থাকলেও, কবজির সাহায্যে লিখেই তিনি একে একে পিইসি, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় পাস করেন। পরে কারমাইকেল কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। গত ২০২২ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হন। এবারে দ্বিতীয় বারেরমতো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পান মিনারা।

মায়ের মৃত্যুর পর সাতবার নদীতে বাড়িভাঙনের শিকার বাবা রফিকুল ইসলাম মিনারার খালাকে বিয়ে করেন। শারীরিকভাবে মিনারা স্বাভাবিক থাকলেও তার দুহাতে কোনো আঙুল নেই। দুই হাতের কবজির সাহায্যে কলম ধরে তিনি এখন পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে আসছেন।

বাবা রফিকুল ইসলাম দিনমজুর। অভাবের সংসার তার। নুন আনতে পানতা ফুরায়। নদী ভেঙে পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ পাউবো বাঁধে আশ্রিতদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত তার।

সমাজসেবা অধিদপ্তর মিনারার নামে মাসিক ৬০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্দ দেয়। এ টাকায় চলত তার পড়ালেখার খরচ।

ভর্তির জন্য কুড়িগ্রাম কলেজে পূর্বের ভর্তি বাতিল করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রায় ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ভর্তি হয়ে শিক্ষাজীবনের বাকি পথ কীভাবে পাড়ি দেবে তা তার জানা নেই। মিনারার বাবা রফিকুল ইসলাম মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবান ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রয়োজনে ০১৭০৪-৩১১১৯২ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ