সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তিন পুলিশ ক্লোজড, তদন্ত কমিটি গঠন

আহত সাংবাদিক এমএ সালাম বিশ্বাসকে দেখতে যায় বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা
আহত সাংবাদিক এমএ সালাম বিশ্বাসকে দেখতে যায় বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা  © টিডিসি ফটো

দৈনিক আমার দেশের বদরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এমএ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক এএসআই ও ২ কনস্টেবলকে ক্লোজড এবং ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম।

এর আগে বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে থানা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যকার হট্টগোলের ছবি তুলতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধর করেন। পরে চ্যাংদোলা করে ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধর করে। ছিড়ে ফেলা হয় গায়ে থাকা শার্ট। এরপর তাকে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এ ঘটনার পর অভিযুক্তদের সাথে মীমাংসা করে দেয়ার নাটক করেন ওসি। পরে সহকর্মীরা সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।

মারধরের শিকার সাংবাদিক এম এ সালাম জানান, ‘আমি রোজা থাকায় শরীর খুব দুর্বল ছিল। মারধরের পর আমি পুলিশকে অনুরোধ করি আমার ফোন দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাকে তার রুমে নিয়ে যান এবং প্রায় ৪ ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখেন। আমার পরনের ছিন্নভিন্ন শার্ট আমাকে না নিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনে এনে আমাকে পড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমার কিছু সহকর্মী সেখানে আসলে ওসি সাহেব অভিযুক্তদের সাথে হাত মিলিয়ে দিয়ে মীমাংসার করে দেয়ার কথা বলেন। এরপর সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।’

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার শাকিল মোবাশ্বের জানান, তার পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে দাগ রয়েছে। পায়ের জন্য একটা এক্সরে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ডেঞ্জার লেভেলে নাই।

বদরগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে মীমাংসা করে দেয়া হয়েছে।’

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম জানান, বদরগঞ্জ থানায় সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধরের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় থানার এএসআই রবিউল আলম (এবি-৩৮১), কনস্টেবল আলামিন হোসেন (৯৯৪) ও মজিবুর রহমানকে (৬৩০) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( এ সার্কেল) শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান জানান, ‘এটি জঘন্যতম অপরাধ করেছে পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে হট্টগোলে জড়াবে, আর ছবি তুললে তাদের অসুবিধা হবে। এটা মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। এ ব্যাপারে তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। যাতে কখনই কোন পুলিশ সদস্য এ ধরনের অপরাধে না জড়ান।’


সর্বশেষ সংবাদ