‘বেঁচে থাকা অবস্থায়ই বাবাকে মেরে ফেলেছেন জবি শিক্ষকরা’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রয়াত জবি উপাচার্যের মেয়ে তাসলিম হক মোনা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রয়াত জবি উপাচার্যের মেয়ে তাসলিম হক মোনা  © টিডিসি ফটো

বেঁচে থাকা অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মেরে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার একমাত্র সন্তান তাসলিম হক মোনা। একইসাথে বাবার (প্রয়াত জবি উপাচার্য) অসুস্থতাকালীন সময়ে শিক্ষকদের কিছু আচরণ নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্র‍য়াত উপাচার্যের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শোকসভা আয়োজন করা হয়। সভায় তার দেওয়া বক্তব্যে তাসলিম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তাসলিম অভিযোগ করে বলেন, বেঁচে থাকা অবস্থায় আমরা যেসব মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেছি, সেটা আসলে অবর্ণনীয়। বাবা আইসিউতে গিয়েছিলেন মাত্র একদিন হয়েছিল। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমি জানতে পারি, ‘বাবা ৫ দিন ধরে আইসিউতে আছেন’ এমন একটি সংবাদ ছড়ানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে।

‘‘এটা তো এক প্রকার এমন বিষয় যে, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে মেরে ফেলেছেন। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু এ পেশার কিছু মানুষের এমন অসুস্থ মানসিকতা হতে পারে সেটা ভাবিনি।’’

তাসলিম বলেন, আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাইনি। কারণ এক হাতে পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। তবে এমন অসুস্থ মানসিকতার শিক্ষকদের মধ্যেও কিছু ভালো মানুষ ছিলেন, যারা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন।

অধ্যাপক ইমদাদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যথেষ্ট দায়িত্বশীল ছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে তার মেয়ে তাসলিম বলেন, শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও বাবা সিন্ডিকেট সভা করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির লোকজন বারবার সিন্ডিকেট সভা পেছানোর জন্য চিঠি দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ভিসির দোয়া মাহফিল রেখে খোশগল্পে মাতলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা

তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, শেষের দিকে বাবা যেসব নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলোর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তার মানে আপনারা আপনাদের ভিসি স্যারকে বিশ্বাস করেন না! মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ফোন দিয়ে চার্জ করা হয়েছে, যে উনার আসলে কি অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে যারা আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন, আমি তাদের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো।

বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাসলিম হক মোনা বলেন, কোন মানুষই ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। আমার বাবাও একজন মানুষ। তিনি কোন ভুল করে থাকলে আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের অনেক আক্ষেপ আছে, আমি জানি। অনেকের প্রমোশন হয়নি বা অনেক কিছুই হয়নি। এটা নিয়ে অনেকের আক্ষেপ। সেটার সংবাদ আমাদের কাছে এসেছে। তিনি অসুস্থতার মধ্যেও অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু পারেননি।

এদিকে, এদিন দুপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে শোকসভা ও মসজিদে দোয়া-মাহফিল আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও অন্যান্যদের নিয়ে আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়া করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা স্থগিত করি। যেহেতু আমাদের সংবাদ সম্মেলনের জন্য খাবার অর্ডার দেওয়া ছিলো, তাই সেগুলো সাংবাদিকদের দিয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষকরা কেউ খাইনি।

অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং হামদ ও নাত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শোকসভা শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। এসময় প্র‍য়াত জবি উপাচার্যের সহধর্মিণী নুরুন নাহার বেগম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টর, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট, জবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন, কর্মচারী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence