চাপে পড়ে দেড় কোটি টাকা ফেরত দিলেন কুবির ৭ শিক্ষক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে আর ফেরেননি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষক। ফলে কয়েকজন শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে সাত জনের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় অর্ধশত শিক্ষক বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। শিক্ষা ছুটি শেষে তাদের কতজন দেশে ফিরবেন, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিদেশে পড়তে গিয়ে দেশে ফিরে না আসার প্রবণতা বাড়ায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগী হওয়ার পর চাপে পড়ে টাকা ফেরত দেওয়া শিক্ষকেরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফরোজা হক, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমি আক্তার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাসার, কামরুল হাসান ও সাদিয়া সুলতানা এবং আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফিদা হাসান।

সাত শিক্ষকের কাছ থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭০৮ টাকা আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিদেশ থেকে ফেরত না আসা আরও তিন শিক্ষকের অর্থ আদায় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সাত জন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছি।‘

আরও তিন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, বাকি শিক্ষকদের টাকা সঠিক সময়ে না পেলে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। তবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে কোনো বিভাগীয় মামলা বর্তমানে চলমান নেই।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন অর্ধশতের বেশি। শিক্ষা ছুটি শেষে তাদের অনেকে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেবেন না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন অর্ধশতের বেশি। শিক্ষা ছুটি শেষে তাদের অনেকে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেবেন না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। শিক্ষকরা বলছেন, যারা শিক্ষক হয়, তাদের একটি বড় অংশই বিদেশে যাওয়ার সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। কিন্তু শিক্ষকতার যে মহত্ত্ব, তা তারা অর্জন করতে পারেননি। অথচ তারা দেশের জনগণের অর্থে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু জনগণের যে চাওয়া, সেটি তারা পূরণ করছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের অবশ্যই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটা বড় অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসছে না। ফিরে না আসার কারণ হিসেবে আমরা হয়তো তাদের এখনো যে গবেষণা করেছেন কিংবা কোথায় গবেষণা কাজে লাগাবেন, সে বিষয়টি নিশ্চায়ন করতে পারিনি।’

আরো পড়ুন: মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ভিত গড়ছে ৫ মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

তারপরেও রাষ্ট্রের জনগণের জন্য কিছু করার তাগাদা থেকে কেউ কেউ ফিরে আসেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ফিরে আসাই উচিত। একটা সংখ্যা ফিরে না আসার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত তিনি যে উন্নত জীবন ও নিরাপত্তায় থাকেন, সেটি তিনি ফেলে আসতে পারেন না। একটা পারিবারিক চাপও থাকে শিক্ষকদের। তিনি যখন বিদেশে যান, তখন তিনি তার পরিবার নিয়ে যান। ফলে পরিবারের সন্তানরা ফিরে আসতে চায় না।’

সেখানে তারা একটি সুন্দর জীবন পায় উল্লেখ করে রবিউল আউয়াল চৌধুরী আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে আরেকটি সত্য হলো, কেউ কেউ ফিরে না আসার জন্যই সেখানে যায়। এরকমও মাঝে মাঝে শোনা যায় যে, শিক্ষক হতে চেয়েছেন আসলে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য, যাতে আর ফিরে না আসতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য এ বিষয়গুলো নিয়ে সবার চিন্তা করা উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ