প্রথাবিরোধী লেখক আহমদ ছফার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও অনুবাদক আহমদ ছফা
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও অনুবাদক আহমদ ছফা  © সংগৃহীত

গত শতাব্দীর শেষার্ধে যারা মুক্তচিন্তা-কর্মে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের অন্যতম আহমদ ছফা। খ্যাতনামা এই কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও অনুবাদকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০০১ সালের ২৮ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

জীবদ্দশায় আহমদ ছফা তার প্রথাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে আলোচিত ও সমালোচিত ছিলেন। শুধু লেখক হিসেবেই নন; বরং সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবেও আহমদ ছফা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ গঠন এবং এর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন আহমদ ছফা। পরে কলকাতায় গিয়েও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘দাবানল’ নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে রাজনৈতিক সমাবেশ, লজ্জিত ও দুঃখিত শিক্ষামন্ত্রী (ভিডিও)

মুক্তবুদ্ধির এই সাহসী লেখক ১৯৮৬ সালে জার্মান ভাষার ওপর গোথে ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মান জ্ঞানই তাকে গোথের অমরকর্ম ‘ফাউস্ট’ অনুবাদে সাহস জুগিয়েছে। গান, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখা মিলিয়ে ৩০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি।

আহমদ ছফা`র প্রথা বিরোধীতা ও স্পষ্টবাদীতা ৭০- দশকে অনেককে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর সান্নিধ্যে এসে পরবর্তীতে কীর্তির সাক্ষর যারা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, ফরহাদ মজহার, শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান অন্যতম।

প্রতিষ্ঠানবিরোধী এ লেখক ও চিন্তাবিদ ১৯৭৫ সালে লেখক শিবির পুরস্কার ও ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমির সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাকে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে (মরেণোত্তর) একুশে পদক প্রদান করা হয়।

আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া শেষে ছফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ছফা একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, অনুবাদ ও শিশুসাহিত্যে অবদান রেখে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য-সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেন। 

আহমদ ছফার উপন্যাসগুলো হলো সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), উদ্ধার (১৯৭৫), একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৯), অলাতচক্র (১৯৯০), ওঙ্কার (১৯৯৩), গাভীবৃত্তান্ত (১৯৯৪), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬), পুষ্পবৃক্ষ ও বিহঙ্গপুরাণ (১৯৯৬)। ছফার গল্পগ্রন্থ- নিহত নক্ষত্র (১৯৬৯)। ছফার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- জল্লাদ সময়, একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা, লেনিন ঘুমোবে এবার। 

জার্মান কবি গ্যেটের বিখ্যাত কাব্য ‘ফাউস্ট’-এর অনুবাদ এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘সংশয়ী’ রচনার বাংলা রূপান্তর আহমদ ছফাকে অনুবাদক হিসেবেও খ্যাতি এনে দেয়। ছফার চিন্তার প্রকাশিত হয়েছে তার দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ (১৯৭৩) ও ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ (১৯৭৬)-এ। এ ছাড়া সমাজের ইতিহাস, বিবর্তন ও মননশীলতা নিয়ে ছফা লিখেছেন ‘সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস’ ও ‘যদ্যপি আমার গুরু’-এর মতো গ্রন্থ। আহমদ ছফা ছিলেন দক্ষ এবং উদ্যমী সংগঠক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আহমদ শরীফের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেখক শিবির গড়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ