কানাডায় সাহসিকতার পুরস্কার পেলেন ঢাবি শিক্ষিকা রোমানা

রোমানা মঞ্জুর
রোমানা মঞ্জুর  © সংগৃহীত

সময়টা ২০১১ সাল। স্বামীর আঘাতে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রুমানা মনজুর। তাতে কী! দমে যাননি রুমানা। পথচলা সাদা লাঠির সাহায্যে হলেও পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর কানাডায়। নিয়েছেন আইনে উচ্চশিক্ষা।

এ তো পুরনো গল্প! নতুন জীবন গল্প হলো— বর্তমানে তিনি সেখানেই (কানাডা) বিচার বিভাগের অধীনে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিজেনাস’–এর একজন আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোমানা। আর গতকালের খবর হলো— দেশটির ভ্যাংকুভারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘কারেজ টু কামব্যাক-২০২০’ শীর্ষক সাহসিকতার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোস্ট মেন্টাল হেলথ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৫ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে; যার একটি পেয়েছেন রোমানা মঞ্জুর। কারেজ টু কাম ব্যাক অ্যাওয়ার্ড-২০২০ (Courage To Come Back Awards 2020)-এ ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলেটেশ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার পান তিনি। এডিকশন, মেন্টাল হেলথ, ইয়ুথ এবং মেডিকেল ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও চারজন।

কোস্ট মেন্টাল হেলথ বলছে, রুমানা মনজুর এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন যে, অন্য কেউ সেটি মোকাবেলা করতে পারতেন না। তিনি এক বর্বর আক্রমণে অন্ধ হয়েও তার যুবতী মেয়েকে লালন-পালন করার পাশাপশি নতুন দেশে নতুন জীবন ও ক্যারিয়ার গড়ার সাহস করেছেন। তাই তিনি আমাদের সকলের জন্য সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।

অদম্যতার এ পুরস্কার পেয়ে খুশি রুমানা মনজুর নিজেও। পুরস্কারটি পরিবার ও বন্ধুদের উৎসর্গ করে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর বর্ষে আমি এই পুরস্কার পেয়েছি। এ পুরস্কার আমি পরিবার ও বন্ধুদের উৎসর্গ করলাম, যাদের সমর্থন ছাড়া আমি আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমি সেইসব ব্যক্তিদের কথাও স্মরণ করছি, যারা আমাকে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আমার দাদী, ভাই এবং ফুপা— যারা সর্বদা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

তথ্যমতে, ২০১১ সালে রুমানা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় ছিলেন। ছুটিতে দেশে ফিরলে ওই বছরের ৫ জুন ঢাকায় ধানমণ্ডির বাসায় স্বামী হাসান সাইদের নির্যাতনের শিকার হন রুমানা। ওই হামলায় নাকে ক্ষত হওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টি শক্তি হারান তিনি। রুমানা স্বামীর নির্যাতনে যখন দৃষ্টিশক্তি হারান, তখন তার একমাত্র মেয়ে আনুশেহের  বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তার চোখের সামনেই ঘটেছিল ঘটনা। সেই মেয়ের বয়স এখন ১৫ বছর।

পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর কানাডার ভ্যাংকুভারের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউবিসি) তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়। আবার কানাডায় ফেরা। সেখানে যাওয়ার পর থেকে রুমানা মনজুরের পথচলা থমকে যায়নি ক্ষণিকের জন্যও। ২০১১ সালে কারাগারেই মৃত্যু হয় রুমানার স্বামী হাসান সাইদের।

দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর বহু বাধা আর জটিলতা মোকাবেলা করে দুই বছরের মাথায় ইউবিসি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর আইন পড়া শুরু করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সাল থেকে তিনি দেশটির  বিচার বিভাগে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিজেনাস’–এর একজন আইনজীবী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুরস্কার পাওয়া রোমানাকে নিয়ে ভিডিও


সর্বশেষ সংবাদ