নববর্ষে জুলাই অনুপ্রেরণা: উৎসব যখন প্রতিবাদের প্রতীক

নববর্ষে জুলাইয়ের প্রতীক।
নববর্ষে জুলাইয়ের প্রতীক।   © টিডিসি ফটো

৩৬ জুলাই এখন আর ক্যালেন্ডারের বাইরে থাকা এক কল্পিত তারিখ নয়—একটি ইতিহাস ও এটি একটি প্রজন্মের গর্জন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৩৬ জুলাই হয়ে উঠেছে তরুণদের বিপ্লবের প্রতীক। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন সময় নির্মাণের এক প্রত্যয়ী সংকেত। সেই চেতনারই প্রতিফলন দেখা গেল এবারের পহেলা বৈশাখে।

বর্ষবরণের উৎসব আর প্রতিবাদের ভাষা এক হয়ে গেল। চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রায় ৩৬ জুলাইয়ের প্রতীক ভেসে উঠতেই জনতার চোখে ঝিলিক দেয় গর্ব ও মুখে ফুটে ওঠে প্রত্যয়ের হাসি। আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক আনন্দ শোভাযাত্রা বের হলে এই চিত্র দেখা যায়।

পহেলা বৈশাখ, বাংলা বছরের প্রথম দিন। বরাবরই বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন। তবে সময়ের প্রেক্ষাপট বদলের সঙ্গে সঙ্গে এ উৎসবের ব্যঞ্জনাও বদলেছে। ২০২৫-এর ১৪ এপ্রিল আজকের এই দিনে উদযাপিত পহেলা বৈশাখ। এটি হয়ে উঠেছে কেবল ঋতু পরিবর্তনের উৎসব নয়, বরং হয়ে উঠেছে এক রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ছিল—নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—যা উৎসবের আনন্দের মাঝেই রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ধ্বনি ফুটে উঠেছে। এই প্রতিপাদ্য যেন প্রমাণ করে, বর্তমান সময়ে নববর্ষ শুধু আনন্দ নয়। এটি একটি অবস্থান, একটি প্রতিবাদ ও একটি চেতনা।

এই নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন—৩৬ জুলাই-কে কেন্দ্র করে। এই তারিখটি একসময় হয়তো নিছকই একটি কল্পিত বা প্রতীকী দিন হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সময়ের বাঁকে এটি আজ একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রতীকে রূপ নিয়েছে। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৩৬ জুলাই হয়ে ওঠে এক বিপ্লবী সময়চক্রের নাম।

আরো পড়ুন: নতুন দিনের বার্তা দিয়ে শেষ হলো আনন্দ শোভাযাত্রা

এটি এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রতীক, স্বপ্ন আর সংগ্রামের দিন। ফলস্বরূপ, এবারের পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবেও ছায়া ফেলেছে সেই ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবী চেতনা—বিশাল মুখোশ, শিল্পকর্ম, ব্যানার ও প্রতীকী উপস্থাপনায় ফুটে উঠেছে প্রতিবাদের রূপক ভাষা।

৩৬ জুলাইয়ের প্রতিক বর্তমান প্রজন্মের কাছে যেন এক জীবন্ত স্মারক—যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। আনন্দের মধ্যেও সংগ্রাম বাঁচে, ঐতিহ্যের মধ্যেও আশার আলো জ্বলে। এবারের নববর্ষ তাই ছিল এক ঐতিহাসিক পুনরুদ্বোধনের উপলক্ষ্। এখানে সংস্কৃতির সৌন্দর্যের ভেতর লুকিয়ে আছে রাজনীতির প্রগাঢ় বার্তা। নববর্ষের উৎসব এভাবেই হয়ে উঠেছে শুধু অতীতকে ধারণের নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য এক দৃপ্ত উচ্চারণ—একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের প্রত্যয়, যেখানে ফ্যাসিবাদের আর কোনো স্থান থাকবে না।


সর্বশেষ সংবাদ