কভিড-উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় হবে ‘ব্লেন্ডেড ক্যাম্পাস’

ড. আতিউর রহমান
ড. আতিউর রহমান  © সংগৃহীত

কভিড-১৯ পুরো বিশ্বের সমাজ ও অর্থনীতির খোল-নলচে বদলে দেবে। এই সংকট শিক্ষার ওপর বড় আঘাত হেনেছে। এখনও ছেলেমেয়েরা ঘরের বার হতে পারছে না। তবে বাংলাদেশ শিক্ষাসহ সকল খাতেরই পুনরুদ্ধারে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক দশক আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কৌশল গ্রহন করায় এই সংকট মোকাবেলা করার সংগ্রামে বাংলাদেশ যথেষ্ট সৃজনশীলতা ও শক্তিমত্তা দেখিয়ে চলেছে। তাই আশেপাশের সকল দেশের চেয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনেকটাই ভালো করছে।

গতকাল (১৩ সেপ্টেম্বর) গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমি এসব কথা বলেছি। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সামদানি ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ অনলাইন সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষক, নবীন ছাত্র-ছাত্রীরা এবং তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে হচ্ছে এবং শিক্ষকদের সকল লেকচার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে, শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত তাদের অ্যাকাডেমিক ও অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় হচ্ছে এবং উপাচার্য সকল শিক্ষকদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রতি সপ্তাহে মিটিং করেন জেনে আমি খুবই খুশি হয়েছি।

এই অভিজ্ঞতা তাদের কভিড-উত্তর ‘ব্লেন্ডেড ক্যাম্পাস’ গড়তে খুবই কাজে লাগবে বলে আমার মনে হয়েছে। আগামী দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো প্রশাসনের পুরো কাজই অনলাইনে হবে। অনেক ক্লাসও অনলাইনে হবে। শুধু ল্যাবরেটরি ও গ্রুপের কাজগুলো সামনাসামনি হবে। তবে সব ক্লাস অনলাইনে করাও ঠিক হবে না। ছাত্র-ছাত্রীদের মুখোমুখি হয়ে না পড়ালে অনেক প্রশ্ন অজানাই থেকে যাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চিরকালীন মানবিক সম্পর্কও গড়ে উঠবে না। আর সেজন্যেই একটি ব্লেন্ডেড বা মিশ্র ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলছি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধ এবং মনের জানালা খুলে দেবার স্হান। কর্মজীবনের জন্য উপযুক্ত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা ছাড়াও সম্ভব নিয়োগদাতাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও অফিসে ইন্টার্ন হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠানোর কাজে সহায়তা করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর এসব পাঠ-বহির্ভূত কাজের পুরোটা অনলাইনে হবার নয়।

যেসব ছাত্র-ছাত্রীর ভালো ডিজিটাল ডিভাইস ও ডাটা কেনার সামর্থ নেই, তাদের জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করে নিয়মিত সহায়তা বা স্কলারশিপের ব্যবস্হা করাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বের একটি অংশ। শুনে খুশি হয়েছি যে, গ্রীণ বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াবার উদ্যোগ নিচ্ছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয় যেন এমন সহৃদয়তার পরিচয় দেয় তেমনটিই আশা করছি।

একইসঙ্গে সামর্থবান ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমার আবেদন থাকলো যে, তারাও যেন তাদের পাশের অসমর্থ সহপাঠির পাশে দাঁড়ানোর মতো মনোভাব পোষণ করে। মনে রাখা চাই, জীবন আর শিক্ষা আলাদা হতে পারে না। তাই জীবন থেকে শিক্ষা নেবার যে সুযোগ করোনাকাল আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে তার যেন সদ্ব্যবহার করতে আমরা ভুল না করি। সহমর্মী জীবনচলার চেয়ে বড় আর কোনো পাঠক্রম হতে পারে না।

আগামী দিনের বিশ্ব হোক আরও সবুজ, আরও মানবিক সেই প্রত্যাশাই করছি। আগামী দিনের বাংলাদেশের রুপান্তর হোক আরও সবুজ, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর


সর্বশেষ সংবাদ