ঢাবির অনেক শিক্ষক ৪ জায়গায়ও পার্ট-টাইম পড়ান
- ড. কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কতজন শিক্ষক পার্ট-টাইম ক্যাম্পাসের বাহিরে অন্যত্র পড়ান? একজন সর্বোচ্চ কয়টা পার্ট-টাইম অন্যত্র পড়ান? এরকম একটা সার্ভে বা গবেষণা খুব জরুরি। নিজে জেনে এবং আশপাশ দেখে, সহকর্মীদের আড্ডায় শুনে ধারণা হয়েছে- অন্তত বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি অনুষদের অনেক শিক্ষক ২ থেকে ৪ জায়গায় পড়ান। আর যারা কোথাও পড়ান না, তাদের একটা বড় অংশ রাজনীতি করে সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত থাকে- যা লেখাপড়া ও গবেষণার পরিবেশকেই ধ্বংস করে ফেলে।
পৃথিবীর এমন একটি দেশ দেখাতে পারবেন, যেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৩ থেকে ৪ বা ৫ জায়গায় পার্ট-টাইম পড়ান? ২ বা ৩ জায়গায় কেন ১ জায়গায়ও পড়ায় না। ভারতের আইআইটিগুলোর কথা ধরুন, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কিংবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ধরুন; তাদের কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের বাহিরে কোথাও পড়ান না। আসলে বলা উচিত পড়াতে হয় না। আমাদের শুধু বিশ্ববিদ্যালয় না। স্কুলের শিক্ষকরাও স্কুলে পড়ানোর বাহিরে প্রাইভেট বা কোচিং পড়ান। দুনিয়ার কোথায় এমন পাবেন?
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যার ক্লাসে পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণা করতে হয়, ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের সময় দিতে হয়, কিছু অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ করতে হয়। যিনি একাধিক জায়গায় পার্ট-টাইম পড়াবেন, তাকে নিশ্চিতভাবে নিজের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেন বা করতে হয়। শিক্ষকতা একটি ২৪ ঘণ্টার চাকরি। একজন শিক্ষক ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও লেখাপড়া বা গবেষণার কথা ভাবেন। এইরকম একটা ডিমান্ডিং চাকরির জন্য যদি এমন বেতন দেওয়া হতো, যাতে তাকে কোথাও পার্ট-টাইম পড়াতে না হতো।
আমাদের একজন বিখ্যাত শিক্ষক বলেছিলেন, এমনভাবে কারিকুলাম বদলে দেবেন- যাতে কোচিং ব্যবসায়ীরা দেওলিয়া হয়ে যাবে। তাদেরকে অন্য কিছু খুঁজতে হবে। কত শিশুতোষ ভাবনা। স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট বা কোচিং-এ কেন পড়ান? বাংলাদেশের ইংরেজি মাধ্যমের কারিকুলাম কি খারাপ? তবুও বাংলাদেশে কেন ইংরেজি মাধ্যমে কোচিং হয়? সমস্যার মূল উদঘাটন না করে সমাধান জিন্দেগিতেও হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও পার্ট টাইম পড়ানো কি আইন করে বন্ধ করা যাবে? A person who is in great need of something will find a way to get it and break the law if needed. কারণ- Necessity knows no law or bounds!
আরো পড়ুন: আবাসন সংকট: উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ঢাবি ছাত্রীদের অবস্থান
শিক্ষকদের বেতন কম দিয়ে তাদের অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে ১০০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেয়ে বেশি বেতন পেতেন। আর এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৩ গুণ বেশি পান। এমন কি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ৩ গুণ বেশি পান। ১০০ বছর আগে ৪ টাকা মণ চাউল পাওয়া যেত।
একজন অধ্যাপক বেতন পেতেন ১২শ টাকা। সেই হিসাবে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন হওয়ার কথা প্রায় ৭ লাখ টাকা। সেটা না দিয়ে অন্তত বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেই বেতন, সেটা দিলেও হয়। বেতন ম্যাটার্স। বেতন বেশি ছিল বলেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সত্যেন বোস, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ ও রমেশ চন্দ্র মজুমদারদের মতো অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিল। আর তাদের পেয়েছিল বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী অতীত তৈরি হয়েছিল।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)