প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ৫ হাজার টাকা বৃত্তি মেধাবিকাশের পথ সুগম করবে

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি ফটো

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়া হবে,’ এইটা একটা অসাধারণ সংবাদ, একটা অসাধারণ উদ্যোগের শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধার গণকবর হয় প্রথমবর্ষেই। আমাদের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের দিকে একটু বেশি নজর দেওয়া উচিত। সারা পৃথিবীতেই এইটা করা হয়। 

ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় কারণ তারাই সবচেয়ে vulnerable! তাদের বয়স কম, অনেকের ক্ষেত্রে গ্রাম থেকে প্রথম শহরে আসা এবং কোথাও থাকার জায়গা না থাকা ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের আর্থিক লোনের ব্যবস্থাও করা উচিত।

প্রথমবর্ষে আবাসিক হলে সিট্ না পাওয়া বা সিট্ পেলেও সেটা গণরুমে যেখানে ৪ জনের জন্য তৈরি রুমে ৪০ জন ঠাসাঠাসি করে থেকে শিফটে ঘুমানো এরপরেও জোর করে মিটিং মিছিলে নেওয়া অন্যতম কারণ। তার উপর আছে গেস্ট রুম টর্চার। এর কারণে যে কত মেধাবী ছাত্রের মেধার অপমৃত্যু হয় সেই পরিসংখ্যান কি কেউ করেছে? এইসবই হয় তীব্র আবাসিক সংকটের কারণে। 

এদের কেউ কেউ যারা আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল তারা চেষ্টা করে মেসে থাকতে। এখন প্রথমবর্ষের সবাই যদি ৫ হাজার টাকা করে পায় এবং তারা যদি মেসে থাকে তাহলে অনেক শিক্ষার্থীই একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থেকে লেখাপড়াটা করতে পারবে। তারা যদি স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে, তাহলে আমার বিশ্বাস প্রথমবর্ষের বিরাট একটি অংশের মেধাবিকাশের পথ আরও সুগম হবে। যদিও বিষয়টি কেবল একটি বিভাগের জন্য তবুও এটি একটি উদাহরণনীয় এবং আমার বিশ্বাস এই উদাহরণকে ব্যবহার করে অন্য এলামনাইরাও এগিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন: প্রথম বর্ষের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়া হবে : ঢাবি ভিসি

সারা বিশ্বের ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইরা তাদের আলমা ম্যাটারের জন্য অনেক কিছু করে। এইটা সবাই একটা দায়িত্ব হিসেবে দেখে। এই দায়িত্ব পালন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটি পালন করলে আজকের শিক্ষার্থীরা যখন এলামনাই হবে তারা ভাববে তাদের ভালোভাবে তৈরির পেছনে এখনকার এলামনাইদের ভূমিকা আছে। 

এই এলামনাইরা যদি সাহায্য না করতো তারা এতটা ভালো নাও করতে পারতো। এখন তাদের দায়িত্ব যে তাদের সাহায্যে ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা যেন তারা শিক্ষার যেমন পরিবেশ আশা করেছিল তেমন পরিবেশ পায়। এভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠলে এলামনাইদের ছেলেমেয়েরাও একটা ভালো সমাজ পাবে এবং এর ফলে বাংলাদেশ বাসযোগ্য একটা দেশ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত একটা endowment fund তৈরি করা যেখান থেকে আয় করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া যায়। কে কত বৃত্তি পাবে সেটা ভর্তির সময়ই নির্ধারিত করতে হবে যাতে ভর্তি হওয়ার পর তাকে টাকা পয়সা নিয়ে তেমন ভাবতে না হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের endowment অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভ এর চেয়ে বেশি। প্রায় একই কথা বলা যায় বিশ্বের সেরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের endowment fund এর পরিমাণের সাথে তার শিক্ষার মানের একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ