আমাদের চেয়ে কলকাতার অধ্যাপকের বেতন তিন গুণ বেশি

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

কলকাতায় ১ লিটার তরল প্যাকেটজাত দুধের দাম ৫০ টাকা আর বাংলাদেশে এর দাম ৯০ টাকা। প্রায় দ্বিগুন। অথচ কলকাতায় মানুষের বেতন আমাদের চেয়ে বেশি। যেমন আমার মতো একজন অধ্যাপকের বেতন চেয়ে কলকাতার একজন অধ্যাপকের বেতন প্রায় তিন গুণ বেশি।

কলকাতায় ৫ হাজার টাকায় দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া পাওয়া যায়, যেখানে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট আছে। শুনেছি পিএইচডি করছে এমন শিক্ষার্থীরা এমন বাসা নিয়ে থাকে। সেখানে একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীর ফেলোশিপ প্রায় ৩৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা হতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। যেমন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স ও আইআইটিগুলোতে ফেলোশিপের পরিমান বেশি।

বাংলাদশের একটি বস্তিতেও এক রুমের বাসা প্রায় ৫ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশের একজন পিএইচডি ছাত্র খবু ভালো ফেলোশিপ হলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পেতে পারে। ১০ দিন কলকাতায় থেকে একদিনও ট্রাফিক জ্যাম পাইনি। এটি একটি অভাবনীয় ব্যাপার। অথচ ৮০ বা ৯০ এর দশকে যখন আমি কলকাতায় গিয়েছি, ট্রাফিক জ্যাম দেখেছি।

রাস্তায় শব্দ দূষণও অনেকটা কমেছে। বিশেষ করে প্রাইভেট কারের হর্ন নেই বললেই চলে, কারণ অধিকাংশ প্রাইভেট কারই এখন মালিক নিজে চালায়। সেখানে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল আছে এবং সবাই সেটা মানে। কলকাতার শিক্ষিত মানুষ এখন নিজের গাড়ি নিজেই চালাচ্ছে। ফলে রাস্তাঘাটে এখন অধিকাংশই শিক্ষিত ড্রাইভার। অন্তত প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে এটি সত্য।

আমরা উন্নত হয়ে গেছি বড়াই আমাদের! অথচ এ শতাব্দীতে এসেও আমরা আমাদের মহানগরের রাস্তাকে ডিজিটাইজড করতে পারলাম না। কলকাতার অধিকাংশ মূল বড় রাস্তায় খানাখন্দ নেই বললেই চলে। রাস্তার মান ভালো কারণ তারা আসল বিটুমিন দিয়ে রাস্তা বানায়। ফলে রাস্তা টেকসই হয়।

আরো পড়ুন: কারিকুলাম দিয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যায় না

আমাদের দুর্নীতিবাজরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি খরচের রাস্তা বানায়, কিন্তু পৃথিবীতে সবচেয়ে কম টেকে। প্রায় ১/২ বছরের মধ্যেই খানাখন্দে ভরে যায়। এতে যে শুধু খরচ আরো বাড়ে তা নয়, রাস্তা পুনঃর্নির্মাণের সময় মানুষের ভোগান্তিও বাড়ে।

কলকাতার রাস্তায় একটিও প্রাডো বা কোটি টাকার গাড়ি দেখিনি। বড় এসইউভি বিলাসবহুল গাড়ি মানে টাটা অথবা মাহেন্দ্র কোম্পানির জীপ্ গাড়ি। আমাদের কার্জণ হলের সামনে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দাঁড়ালে কেবল প্রাডো বা হুন্দাই, নিশান, মিৎসুবিশি প্রভৃতি কোম্পানির বিলাসবহুল কোটি টাকার বেশি মূল্যের গাড়ি দেখা যায়। অথচ তাদের শিক্ষাদীক্ষা ও বেতন স্কেল দেখলে এই দামের গাড়ি চড়ার কথা না।

কেনরে ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাইক্রোবাসে করে সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করছে না? সরকারি আমলারা সরকারের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারতো যদি এদের একটু দেশপ্রেম ও বিবেচনাবোধ থাকতো।

কেন কলকাতা থেকে ঢাকার জীবনযাত্রা বেশি ব্যয়বহুল? কারণ আমরা আগে মানুষ বানানোর বদলে ইট পাথরের উন্নয়নের দিকে ঝুকেছি। বোকা মানুষ প্রচন্ড স্বার্থপর হয়। বোকা যদি শিক্ষিত হয় সেটা আরো ডেঞ্জারাস।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ