শিক্ষার মান খারাপ বলেই বেকারত্বের হার বেশি: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৫ PM , আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৫২ PM

দেশে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণেই বেকারত্বের হার বেশি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। আজ রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের বড় বড় ডিগ্রি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী কি ওই শিক্ষার্থীর যোগ্যতা আছে? অনেক ক্ষেত্রেই নেই। অনেক ক্ষেত্রে সে উপযুক্তভাবে কাজ করতে পারছে না। এতে আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সেক্টরে বাইরের দেশ থেকে লোক এনে কাজ করাতে হয়। দেশে উপযুক্ত লোক পাচ্ছে না বলেই বাইরে থেকে জনবল আনতে হচ্ছে। আমরা যোগ্য লোক তৈরি করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘প্রাইমারি এডুকেশনের ক্ষেত্রে আমাদের মূল টার্গেট হলো-শিশুদের সাক্ষর করে তোলা। যেন তারা নিজের ভাষাটা লিখতে পারে, নিজের ভাষায় পড়তে পারে, নিজের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। গণিত ও বিজ্ঞান, এই দুটি বিষয়ে শিশুদের তৈরি করতে হবে। একটি হলো লিটারেসি, আরেকটি হলো নিউমারেসি বা গাণিতিক ভাষা। শিশুরা যেন পড়তে পারে, শিখতে পারে আর গাণিতিক বিষয়টি জানতে পারে, সংখ্যা কী? অংক কী? যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে পারে। আমরা যদি প্রাইমারি শিশুদের জন্য মিনিমাম এটুকু করতে পারি- তাহলে মনে করব আমাদের শিশুদের জন্য অনেক কাজ করলাম।’
আরও পড়ুন: পদত্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা বললেন কুয়েট উপাচার্য
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিবর্তনটা হলো। সেটি হলো জুলাই অভ্যুত্থান। এখানে সবচেয়ে বেশি শোনা গেছে বৈষম্যহীনতার কথা। আমাদের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। অর্থবিত্তশালীদের সন্তানরা ভালো স্কুলে চলে যান । প্রাথমিকে শুধু মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা যায়। এভাবে শুরুতেই শিক্ষায় সামাজিক বৈষম্য তৈরি করছে এবং স্থায়ী করছে। ফলে আমরা যদি সামাজিক বৈষম্য কমাতে চাই, তাহলে আমাদের কাজ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করা। তাহলে সমাজের মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা সক্ষম হয়ে উঠবে এবং সামাজিক বৈষম্য কমবে। প্রাথমিকের শিশুদের শিক্ষিত করে তোলা, সাক্ষর করে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে যাচ্ছে, পরিশ্রম করছে, কিন্তু দক্ষতার কারণে তারা কম আয় করছে। অন্য সব দেশের দক্ষ শ্রমিকরা বেশি ইনকাম করছে। ফল আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের একজন সন্তান যদি সুশিক্ষিত হয়ে ওঠে, সে যদি শ্রমের কাজও করে এবং সে এমন শ্রমের কাজ করবে যা তাকে হায়ার সোসাইটিতে নিয়ে যাবে। সেজন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। প্রাথমিক শিক্ষায় গন্ডগোল থাকলে উচ্চশিক্ষায় কখনো ভালো করতে পারে না। ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে কিন্তু ভালো কিছু করতে পারবে না। সে জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি- দায়িত্ব নিয়ে শিশুদের লেখাপড়ায় আরও মনোযোগী হয়ে কাজ করবেন।’
আরও পড়ুন: জবিতে ৭ম আন্তবিভাগ ইনডোর গেমস প্রতিযোগিতার উদ্বোধন
তিনি আরও বলেন, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে খেলা, সংগীত, চিত্রকলা চর্চা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শিশুদের মধ্যে অন্যের প্রতি দায় ও দায়িত্ববোধ তৈরি করতে পারলে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হবে।
উপদেষ্টা পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।