আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন করলো বিএডিসি উইমেনস এসোসিয়েশন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫০ PM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ০৫:২০ PM

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ এর প্রতিপাদ্য ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ এর আলোকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর উইমেনস এসোসিয়েশন বর্ণিল আয়োজনে উদ্যাপন করলো নারী দিবস। এ উপলক্ষ্যে সোমবার (১১ মার্চ) বিএডিসির প্রধান কার্যালয় কৃষি ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মেরিনা শারমিনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও বিএডিসি এর সর্বস্তরের নারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ। কেক কাটা, বর্ণিল আনন্দঘন পরিবেশ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদ্যাপিত হয়।
এদিন এসোসিয়েশনটির নারীদের বিশেষ শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় বিএডিসির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাজ্জাদকে।
অনুষ্ঠানে বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক (পাট বীজ) মনিরা রহমান বলেন, বিনা পারিশ্রমিকে মেয়েরা ঘরে বাহিরে কাজ করছে কিন্তু তাদের কাজের কোন মূল্যায়ন হয় না।
নিয়ন্ত্রক অডিট রুনা লায়লা বলেন, প্রমোশনের দিক দিয়ে নারীকে কেবল নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ পুরুষ ও নারী উভয়ই কিন্তু বিএডিসির উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বিএডিসির অর্থ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের সমাজে মূলত প্রাচীন যুগ থেকেই নারীকে গঠনগত দিক থেকে দুর্বল ভাবা হয়। কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ নারীকে দিয়ে সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেওয়া হয়। আবার নারী যদি সে কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করে তবু কটুকথা থেকে পরিত্রাণ পায় না।নারীর সঙ্গে সমাজের কেমন জানি একটা লুকোচুরির সম্পর্ক। ফলে নারী যতই তার জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকে, ততই তাকে টেনে নিচে নামানোর পাঁয়তারা চলে। কিন্তু বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি এবং উন্নয়নে বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করেছেন যা অবশ্যই ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার।
এসোসিয়েশনের সভাপতি মেরিনা শারমিন (মহাব্যবস্থাপক, তদন্ত) বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীরা উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় যেমন বীজ ও সেচ বিভাগ থেকে প্রকল্প পরিচালক হওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে পদগুলো নারীরা পাচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদানেও নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে অথচ তাদের সেই যোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং এই বৈষম্য নিরসন করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, না হলে নারী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে নারী নির্যাতনের চিত্রটি একেবারেই মেলানো যাই না, এখনও কেন নির্যাতন হবে? তাই যেখানেই নির্যাতন হবে সেখানেই আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর এক্ষেত্রে আমাদের বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন পুরুষদের নিকট থেকে।
এসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দরা আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়সমূহ তুলে ধরেছেন। যেমন: নারীর জন্য নির্যাতনমুক্ত ও নিরাপদ, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বৈষম্যহীনভাবে সকলক্ষেত্রে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও নারীবান্ধব, কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে আইন প্রণয়ন করতে হবে, আইএলও কনভেনশন-১৯০ অনুসমর্থন করতে হবে; নারী নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্যাতিতদের সঠিক বিচার পেতে আইনি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে হবে। নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে প্রচলিত দুর্বল বা ত্রুটিপূর্ণ আইনের সংস্কার এবং যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
এছাড়াও সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোল (এসডিজি), দারিদ্র্য দূরীকরণ, লিঙ্গ সমতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নারী-কেন্দ্রিক ইকোসিস্টেম তৈরি ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার সুপারিশসহ নারীকেন্দ্রিক আর্থিক নীতি এবং ইকোসিস্টেমের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
উল্লেখ্য, বিএডিসি উইমেনস এসোসিয়েশন নারীদের উন্নয়ন ও নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সভাপতি মেরিনা শারমিনের নেতৃত্বে এই এসোসিয়েশনটি নারী বান্ধব সংগঠন ও নারী অগ্রগতির রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। নারীদের জন্য ডে কেয়ার ব্যবস্থা, নারী নির্যাতন বন্ধে বিএডিসি নারীবান্ধব বিশেষ সেল গঠন করেছে যাতে বিএডিসির সকল পর্যায়ের নারীরা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা তুলে ধরতে পারে এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে।